বাবা মৃত। মা ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ভাই মানসিক বিকারগ্রস্ত। আছে আর এক ছোট বোন। পরের জমিতে কাজ করে গোটা সংসার চালায় ১৫ বছরের কিশোরী দিদি। বাবলি কুমারী নামে ওই কিশোরী ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য গিয়ে পড়ল গ্রামের দুই ওঝার খপ্পরে। ‘দেবীকে সন্তুষ্ট’ করার অছিলায় মাদক মেশানো লাড্ডু খাইয়ে ওই কিশোরীকে অজ্ঞান করে ধারালো অস্ত্রে কেটে ফেলা হয় তার বাঁ পা। দুই মহিলা ওঝার মতলব ছিল মেয়েটিকে জীবন্ত সমাধিস্ত করার। এক গ্রামবাসী তৎপর হয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে রক্তাপ্লুত অবস্থায় উদ্ধার করে বাবলিকে। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই মহিলা ওঝা (সম্পর্কে বোন), তাদের মা ও ভাইকে। কাল সন্ধ্যায় এ ঘটনাটি ঘটে পূর্ণিয়া জেলার ধানদহা থানার বারদেলা গ্রামে। পূর্ণিয়া সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে পঞ্চদশী বাবলি।
পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, প্রতি সোমবার বারদেলা গ্রামে ২৫ বছরের লাভলি মাহাতো ও ১৫ বছরের দেবী কুমারী নামে দুই বোন ওঝার ভুমিকা পালন করে। আগে থেকে তাদের কাছে নাম লেখাতে হয়।ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ১৫ বছরের বাবলি কুমারী তার ভাই সুকরা মাহাতোর মানসিক চিকিৎসার জন্য কাল গিয়েছিল দেবী-লাভলির কাছে। তাদের ওঝাগিরির দাপটে গ্রামে সকলেই তটস্থ। পুলিশ জানায়, বাবলিকে কাল দুই মহিলা ওঝা জানায়, ভাইকে সুস্থ করতে হলে তার একটি পা ‘দান’ করতে হবে। মন্ত্র পড়ে ওই পা উৎসর্গ করা হবে জাগ্রতা দেবীকে। বাবলিকে মাদক মেশানো একটি লাড্ডু খেতে দেওয়া হয়। লাড্ডু খেয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার বাঁ পাটি কেটে দেয় ওঝারা। অঝোরে রক্ত ঝরতে থাকে। সেই অবস্থায় বাবলিকে জীবন্ত মাটির তলায় পুঁতে ফেলার উদ্যোগ চলতে থাকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত গ্রামের লোকেদের বলা হয়, সাতদিন পরে বাবলিকে মাটির তলা থেকে জীবন্ত অবস্থায় তুলে আনা হবে। তারপরেই তার অসুস্থ ভাই ভাল হয়ে যাবে। ততক্ষণে রক্তক্ষরণে নেতিয়ে পড়েছে কিশোরীটি। গ্রামবাসীরা চোখের সামনে এমন পৈশাচিক কাণ্ড দেখেও ভয়ে প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু এক গ্রামবাসী খবরটি পৌঁছে দেন থানায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। গ্রেফতার করা হয় ওঝা ওই দুই বোন-সহ মা মইনি দেবী এবং ভাই গুড্ডু মাহাতোকে। পুলিশ সুপার অমিত লোঢা বলেন, “গ্রামে এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণাই ছিল না। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |