টেলিকম ট্রাইব্যুনাল টিডিস্যাটের রায়ের জেরে থ্রিজি পরিষেবা নিয়েও জট বাড়ল। থ্রিজি পরিষেবায় টেলিকম সংস্থাগুলির মধ্যে রোমিং-এর গাঁটছড়া মামলার রায় দিতে গিয়ে মঙ্গলবার টিডিস্যাটের দুই বিচারপতি একমত হতে পারলেন না। ফলে বিতর্কে জর্জরিত টেলিকম শিল্পকে আরও বেশি অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরল বলেই মনে করছে শিল্পমহল।
গত বছর নিলামে দেশের এক একটি অঞ্চলে (সার্কেলে) থ্রিজি পরিষেবা দিতে স্পেকট্রাম পেলেও কোনও সংস্থাই সব সার্কেলের লাইসেন্স পায়নি। কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখতে ও একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ আটকাতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু পরে সারা দেশে থ্রিজি পরিষেবা দিতে নিজেদের মধ্যে চুক্তি সেরে নেয় কয়েকটি সংস্থা। যেমন, এয়ারটেল যেখানে থ্রিজি পরিষেবার লাইসেন্স পায়নি (কলকাতা সার্কেল) সেখানে ভোডাফোনের সঙ্গে জোট বাঁধে। আবার আইডিয়া ওই একই কারণে চুক্তি করে ভোডাফোন বা এয়ারটেলের সঙ্গে।
গত ডিসেম্বরে এ ধরনের গাঁটছড়াকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। তাদের দাবি, এ ক্ষেত্রে এক সংস্থা (যেমন, এয়ারটেল) অন্য সংস্থাটির (যেমন, ভোডাফোন) বরাদ্দ স্পেকট্রাম ব্যবহার করায় আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। কিন্তু সরকারি নিয়ম মেনেই চুক্তি (‘ইন্ট্রা সার্কেল রোমিং’) হয়েছে দাবি করে, ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে টিডিস্যাটে মামলা করে এয়ারটেল, ভোডাফোন, আইডিয়া। টিডিস্যাটের দুই সদস্যের বেঞ্চে আজ সেটির শুনানি হয়।
টিডিস্যাটের চেয়ারম্যান বিচারপতি সত্যব্রত সিংহের মতে, যে ভাবে টেলিকম দফতর ওই গাঁটছড়া বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, তাতে ন্যায়বিচার হয়নি। টেলি সংস্থাগুলিকেও যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি গাঁটছড়ার চুক্তি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষেই মত দেন তিনি। কিন্তু বেঞ্চের অপর সদস্য বিচারপতি পি কে রাস্তোগি মতে এ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারই হয়েছে। তাঁর যুক্তি, যে যেখানে থ্রিজির লাইসেন্স পায়নি, সেখানে পরিষেবা দিতে পারে না। লাইসেন্স থাকলে তবেই শো-কজ নোটিস দেওয়ার প্রয়োজন হত। অবিলম্বে নিয়ম ভঙ্গকারী সংস্থাগুলির মধ্যে চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিচারপতিরা দ্বিমত হওয়ায় বিভ্রান্ত টেলি শিল্পমহল। তাদের আশঙ্কা, টেলিকম মন্ত্রক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবে। টেলিকম সচিব আর চন্দ্রশেখর জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করার আগে তাঁরা আইনি পরামর্শ নেবেন।
সংস্থাগুলি অবশ্য মুখ খুলতে চায়নি। তবে সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া-র ডিরেক্টর জেনারেল আর এস ম্যাথুজ বলেন, “আমরা হতাশ। নিয়ম মেনে সব হয়েছে। বিষয়টি প্রযুক্তিগত ভাবে না-দেখে তার আইনি বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া উচিত।” টেলিকম শিল্পের আশঙ্কা, টুজি লাইসেন্স বিতর্কের মধ্যে থ্রিজি পরিষেবা নিয়ে জটিলতা বাড়লে এ দেশে টেলিকম শিল্পে লগ্নির ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা বাড়বে।
|
এককালীন স্পেকট্রাম ফি নিয়ে সুপারিশের ভার মন্ত্রিগোষ্ঠীকে
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
পুরনো টেলি সংস্থাগুলিকে হাতে থাকা সমস্ত স্পেকট্রামের জন্যই এককালীন ফি দিতে হবে কি না, এ বার সে সুপারিশ দেবে সংশ্লিষ্ট ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠী। মঙ্গলবার ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছেই বিষয়টি পাঠাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সে ক্ষেত্রে নিলামের ভিত্তিতে ওই ফি স্থির হবে। ডট এই এককালীন ফি-র প্রস্তাব দিলেও তা নিয়ে আপত্তি জানায় অর্থ মন্ত্রক ও যোজনা কমিশন। তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাব কার্যকর হলে সংস্থাগুলির উপর চাপ বাড়বে। ফলে বাড়বে মোবাইলে কথা বলার খরচ। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সুপারিশ অনুসারে ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। |