রুগ্ণ হিন্দুস্তান কেবলস কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিট কবে নতুন চেহারায় খুলবে, তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু ধীরে হলেও বিষয়টি সদর্থক দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ তথা শ্রমিক সংগঠনগুলি।
মঙ্গলবার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কারখানা পরিদর্শনে আসে। প্রায় সাত ঘণ্টা যন্ত্রপাতি, শেড, জমি, কর্মী আবাসন, কর্মী সংখ্যা, বিভিন্ন মানচিত্র-সহ যাবতীয় খুঁটিনাটি পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞেরা। ফেরার আগে তাঁরা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন।
অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের মেটিরিয়াল কমপোনেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বিদ্যাসাগর বর্মার নেতৃত্বে পাঁচ জনের এই দলে ছিলেন অ্যামিউনেশন এক্সপ্লোসিভ বিভাগের উপ-অধিকর্তা টি এস মূর্তি, আর্মড ভেহিকেলস বিভাগের উপ-অধিকর্তা পি আর শেখ, ওয়েপন ভেহিকেলস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট বিভাগের উপ-অধিকর্তা ভরত সিংহ এবং অর্ডন্যান্স ইকুইপমেন্ট গ্রুপ অফ ফ্যাক্টরির উপ-অধিকর্তা এস কে আচার্য।
সকাল ১০টা নাগাদ বিশেষজ্ঞেরা কারখানায় ঢোকেন। তাঁদের আসার খবর আগেভাগেই শ্রমিকমহলে প্রচার হয়ে গিয়েছিল। অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সকাল থেকেই হাজির ছিলেন শ্রমিক-কর্মীরা। কারখানা সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞেরা প্রথমে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করেন। শেড ঘুরে দেখার পরে কর্মী সংখ্যার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। এর পরে কর্মী আবাসন, বিভিন্ন জলাধার, অব্যবহৃত ফাঁকা জায়গা ও হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখেন তাঁরা। বিকাল ৫টা নাগাদ তাঁরা মাইথন জলাধার দেখতে যান। সেখান থেকেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। |
মাইথন যাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা জানান, কারখানাটি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড নেবে বলে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে কী উৎপাদন হবে, তার জন্য কী যন্ত্রপাতি বসানো হবে, কী ভাবে শেড নির্মাণ হবে মূলত তা দেখতেই এ দিন তাঁরা পরিদর্শনে আসেন। কারখানার চিফ জেনারেল ম্যানেজার বাসুদেব দে বলেন, “ওঁদের চাহিদা মতো যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য আমরা ওঁদের দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা বৈঠকও হয়েছে। তাঁদের কথায় কারখানার ভবিষ্যত বিষয়ে আশাব্যঞ্জক ও ইতিবাচক কথা শুনেছি।”
হিন্দুস্থান কেবলস কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিট তৈরি হয় ১৯৫৫ সালে। মূলত টেলিফোনের জন্য জেলিফিল্ড কেবল তৈরি হত। পরে অন্য নানা ধরনের কেবলও বানানো হত। কিন্তু প্রযুক্তি পাল্টে যাওয়ায় বাজারে ক্রমশ অপটিক্যাল ফাইবার কেব্লের চাহিদা বাড়তে থাকে। ১৯৯৪ থেকে কারখানাটি ক্রমশ রুগ্ণ হতে শুরু করে। ১৯৯৭ সালে বিআইএফআর-এ চলে যায়। ২০০৩ সালে কারখানাটি উৎপাদন সম্পূর্ণ থেমে যায়। সেই থেকে প্রায় ১১০০ শ্রমিক-কর্মীকে কার্যত বসিয়ে বেতন দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড কারখানাটি নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০১১-র জুনে তাদের বিশেষজ্ঞ দল প্রথম কারখানা পরিদর্শনে আসে। গত এক বছরে একাধিক বার বিশেষজ্ঞেরা ঘুরে গিয়েছেন।
কারখানার রূপনারায়ণপুর ইউনিটের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এখানে কী উৎপাদন করবে, সে সিদ্ধান্তও ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শ্রমিক-কর্মীর সংখ্যা নিয়ে। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড সকলকে নিতে চাইছে না। তাঁরা শ্রমিক-কর্মীদের একটা বড় অংশকে স্বেচ্ছাবসর দিতে চায়। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তা কোথা থেকে আসবে এবং কাদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে তা কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রকের বিচার্য। তবে নানা জটিলতা কারখানা খোলার প্রক্রিয়া যে চলছে, সেটাই আপাতত রূপনারায়ণপুরের জন্য সুসংবাদ। |