প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে ধোঁয়া ও আগুন বেরোনোর জেরে ব্যতিব্যস্ত আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিশুরা। চোখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন জামুড়িয়ার কুনস্তরিয়া এরিয়ার বেলবাঁধ প্যাচ লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার আলাদা আলাদা গ্রামের চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষকা এবং অভিভাবকেরা এমন অভিযোগই জানালেন জামুড়িয়ার বিডিও-র কাছে। শীঘ্র আগুন নেভাতে ইসিএলের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন বিডিও।
গত মঙ্গলবার বেলবাঁধ প্যাচের কাছে একটি অবৈধ খাদানে আগুন লাগে। তা ছড়িয়ে পড়ে বৈধ খনিতেও। ইসিএলের কর্মীরা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানকার আগুন নিভিয়ে ফেললেও অবৈধ খনি এখনও জ্বলছে। পাশের একটি ইটভাটাতেও আগুন ছড়ায়। মাটি ভরাট করে আগুন নেভানোর কাজ চলাকালীন ধস নামায় ইটভাটার জ্বলন্ত গহ্বরে পড়ে নিখোঁজ হন ইসিএলের এক নিরাপত্তাকর্মী। |
বৈধ খনির আগুন নিভিয়ে ফেলা হলেও তার পর থেকে সেটি বন্ধ রেখেছে ইসিএল। সোমবার রাতে ফের সেখানে ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, এলাকায় অবৈধ খনন রুখতেই বেলবাঁধে সংস্থা খোলামুখ খনিটি চালু করেছিল। কিন্তু তার আগে দেদার অবৈধ খননের জেরে মাটির তলা ফাঁপা হয়ে রয়েছে। যে অবৈধ খনিতে আগুন জ্বলছে তার পাশেই রয়েছে ইসিএলের খনিটি। আগুন যেখানেই আলগা মাটি পাচ্ছে, তা ফুঁড়ে বেরোচ্ছে। সে ভাবেই ইসিএলের খনিতে ফের ধোঁয়া বেরনো শুরু হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
যে জায়গায় আগুন লেগেছে তার থেকে তিনশো মিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে ভগৎ সিংহ ভূতবাংলা হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোৎজানকি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া আধ কিলোমিটার দূরে বেলবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিলোমিটার খানেক দূরত্বে ধসল প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ দিন এই চারটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা বিডিও জয়ন্ত দাসকে একটি স্মারকলিপি দেন। ধসল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস, ভগৎ সিংহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোজ উপাধ্যায়েরা বলেন, “ধোঁয়ার জেরে এলাকায় বাস করা দুষ্কর হচ্ছে।” ধসল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষিকা সন্ধ্যা চন্দ্র, স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা অলোক মণ্ডলদের অভিযোগ, “ছাই ফেলা হলেও তার উপরে জল দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ছাই উড়ে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে।” বিডিও জয়ন্ত দাস বলেন, “প্রশাসন ও ইসিএলের মধ্যে সমন্বয় রেখেই কাজ হচ্ছে। দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যাপারে ইসিএলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
আগুন নেভাতে ইসিএল বিশেষ তৎপর নয়, গত শনিবার এমন অভিযোগ তুলেছিলেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রদেশ কমিটির সদস্য মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “গত কাল সারা দিন মাটি ও ছাই ভরাটের কাজ বন্ধ ছিল। শুধু পাইপে করে দূর থেকে জল ছেটানো হচ্ছে। আজ সকালে এক দফা কাজ করেছেন ইসিএলের কর্মীরা। ইসিএল কর্মী ও যন্ত্র বাড়িয়ে কাজ করার কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে কিছুই হয়নি।” সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের আবার দাবি, “ইসিএল নিষ্ক্রিয়। এর ফলে বেলবাঁধ কোলিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের আশঙ্কা, এ ভাবে কোলিয়ারির ক্ষতি করে তা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে ইসিএল।” নীলাদ্রিবাবু অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “কাজ ঠিক মতোই হচ্ছে। দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য মাটি, পাথরের সঙ্গে বেশি করে ছাই ফেলা হচ্ছে।” মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মাও বলেন, “বাসিন্দাদের অসুবিধার কথা শুনেছি। তবে ইসিএল যে ভাবে কাজ করছে, তাতে আমরা আশাবাদী তাড়াতাড়িই সমস্যা মিটবে।” |