সে পড়তে চেয়েছিল। বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের বিয়ে রুখে ডাক পেয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে। ‘বিদ্রোহের’ স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছিল রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের হাত থেকে পুরস্কার।
বাঁকুড়ার সেই নাবালিকা অষ্টমী সরেনের ঠিকানা এখন হস্টেল। বাড়িতে সে থাকতে চায় না। মাতৃহারা অষ্টমীকে বাড়িতে ফেরাতে নারাজ তার বাবাও। আশার কথা, অষ্টমী পাশে পেয়েছে প্রশাসনকে।
বাবা নেশা করে তার উপরে অত্যাচার চালায় এবং সে জন্যই তাকে ঘরছাড়া হতে হয়েছেবাঁকুড়া জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিকের কাছে এমনই অভিযোগ করেছিল বছর পনেরোর অষ্টমী। লিখিত অভিযোগে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া কেশিয়াডোবার এই বাসিন্দা জানিয়েছিল, বাবার অত্যাচার সইতে না পেরেই সম্প্রতি ভাইকে নিয়ে সে ছাতনার একটি আশ্রমে গিয়ে উঠেছিল। এর পরে প্রশাসন ডেকে পাঠায় তার বাবা গুরুপদ সরেনকে। তিনি না আসায় জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণা দত্ত সোমবার বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে আসেন নিজের অফিসে। আনা হয় অষ্টমীকেও।
ছিলেন জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক নীলিমা দাসচৌধুরীও। সেখানে অষ্টমী অভিযোগ করে, “বাবা মদ্যপ অবস্থায় আমাকে মারধর করে। দিনের পর দিন এমন চলতে থাকায় ভাইকে নিয়ে ঘর ছাড়ি।” এত দিন ছাতনার দলপুরের আশ্রমে ভাইকে নিয়ে ছিল সে। কিছু দিন আগে তার বাবা গিয়ে ভাইকে বাড়ি নিয়ে আসেন। মেয়েকে আনেননি।
অষ্টমী সরেন |
গুরুপদর দাবি, “আমি মারধর করি না।” তা হলে অষ্টমী কেন তার ভাইকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ল? সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তাঁর বক্তব্য, “ওদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই আশ্রমে গিয়েছিলাম! ছেলেকে জোর করে নিয়ে যাই। কিন্তু মেয়ে আমাকে দেখে পালিয়ে যায়। তাই ওকে আনিনি।”
দিনমজুর গুরুপদ যা-ই দাবি করুন, এ দিন তাঁর সামনেই মহিলা সুরক্ষা আধিকারিকে অষ্টমী জানায়, বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরবে না। স্থানীয় রাজগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এই ছাত্রী অপর্ণাদেবীকে বলে, “আমাকে যেখানে খুশি রাখুন। কিন্তু বাবার সঙ্গে যাব না।” গুরুপদও মেয়েকে নিয়ে যাওয়ায় উৎসাহ দেখাননি। এ বার তাঁর বক্তব্য, “স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মেয়েকে দেখার মতো কেউ নেই। ওকে হস্টেলে পাঠানোর বন্দোবস্ত করুক প্রশাসন।”
দু’জনই অনড় দেখে অষ্টমীকে হস্টেলে পাঠানোর সিদ্ধান্তই নেয় প্রশাসন। মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণাদেবী বলেন, “অষ্টমীর স্কুলের কাছাকাছি হস্টেলেই তাকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” সমাজকল্যাণ আধিকারিক নীলিমাদেবী জানান, অষ্টমী হস্টেলে থাকলেও তার বাবা যাতে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করেন, সে বিষয়ে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও মন্তব্য, “অষ্টমীর মতো মেয়েরা আমাদের গর্ব। ও যাতে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে পারে, আমরা সে দিকে খেয়াল রাখব।”
গৃহহীন অষ্টমীর আপাতত এই আশ্বাসই ভরসা। বাবা পাশে না থাকলেও আছে প্রশাসন। |