|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু ... |
অথচ ভারতীয় হাতি মানুষের কাছে থাকে, তার কাজে লাগে |
হাতিদের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে অনেকগুলি লেখা বেরিয়েছে। সংবাদ ও প্রতিবেদনগুলিকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) রেল বা সড়কপথে হাতিদের আনাগোনা এবং দুর্ঘটনা কিংবা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটা।
খ) হাতিদের, বিশেষত হস্তিশাবকদের নানা রকম দুর্ঘটনায় পড়া।
গ) হাতিদের লোকালয় কিংবা শস্য খেতে চলে আসা।
ঘ) বহু ক্ষেত্রে হস্তিশাবকদের যূথ কর্তৃক বর্জন করা, ইত্যাদি।
ভারতীয় হাতি মানুষের সঙ্গে থাকে এবং মানুষের কাজে লাগে। এমনকী যুদ্ধক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। সে রকম কিন্তু আফ্রিকান হাতিদের সম্পর্কে জানা যায় না। বস্তুত আফ্রিকান হাতিদের সঙ্গে মানুষের সদ্ভাব কখনওই গড়ে ওঠেনি। কিন্তু খুবই চিন্তার ও দুঃখের বিষয় যে, আধুনিক ভারতীয়, বিশেষত গ্রামের আধুনিক মানুষের সঙ্গে হাতির একটি না-বোঝার বা শত্রুতার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। বন্য হাতির দলকে এখন গ্রামের মানুষ অনিষ্টকারী হিসেবে দেখছেন। আমার মনে হয় যে, অসম, তরাই ও ডুয়ার্স জঙ্গল থেকে ছোটনাগপুর বা বিন্ধ্যপর্বতের জঙ্গল সমাকীর্ণ এলাকায় সুদূর প্রাচীন কালে হাতির দলের একটি বার্ষিক পরিযানক্রম ছিল, যেটি তারা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করত। |
|
পরবর্তী কালে ক্রমশ লোকালয়ের এবং আধুনিক যুগে সড়ক ও রেলপথের বৃদ্ধিপ্রাপ্তির ফলে এই পরিযান পথ ক্রমশই খণ্ডিত হতে থাকে। কিন্তু জৈবিক প্রবৃত্তি হাতিদের বাধ্য করে পরিযানের পথে চলতে এবং সেখানে নানা রকম বাধা। হস্তিযূথের আয়তন ক্রমশই ক্ষীণ হওয়ায় এই পরিযান কখনওই সহজ ও সিস্টেমেটিক হতে পারে না। যার ফলে, এই সমস্যাগুলির উদ্ভব হচ্ছে। সম্ভবত এই সব সমস্যার হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ারও কোনও উপায় নেই।
আফ্রিকার হাতিদের ক্ষেত্রে সন্দেহাতীত ভাবে জানা গেছে যে, হস্তিযূথের নেতৃত্বে থাকে কোনও বর্ষীয়সী স্ত্রী-হাতি। ভারতীয় হাতিদের ক্ষেত্রেও অনেকে একই কথা বলেছেন। যদিও বিষয়টি খুব একটা পরিষ্কার নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। আর একটি বিষয় লক্ষণীয়। স্ত্রী-হাতিরা শাবকসহ অথবা গর্ভিণী অবস্থায় লোকালয়ে চলে আসে। এর কারণ খুঁজতেও আমাদের বেশি দূর যাওয়ার দরকার হয় না। প্রায় সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণী বর্তমানে মানুষের উপস্থিতি ও সান্নিধ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ কেউ হয়তো মানুষের কাছে চলে আসে সাহায্য বা সহায়তা পাওয়ার জন্য (সুন্দরবনে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে গর্ভবতী বাঘিনী প্রসবের আগে লোকালয়ে চলে আসছে। এর কারণও সম্ভবত জঙ্গলে সহজলভ্য খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাব এবং লোকালয়ে মানুষের কাছে কোনও রকম সাহায্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা)। গবেষকরা এই দিকগুলির দিকে নজর দিলে বোধ হয় আমরা অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারতাম।
সুবীরকুমার সেন। কলকাতা-৭৪ |
|
|
|
|
|