স্কুলের ক্লাস ঘরে বস্তা ভর্তি চাল স্কুলে পচছে। অথচ ৬ মাস ধরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল বন্ধ। ডেভলপমেন্ট ফি বাবদ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ২৪০ টাকা নিয়ে রসিদ দেওয়া হয়েছে ৬৫ টাকার। এরকম একাধিক ঘটনায় কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ধরা পড়ার পাশাপাশি স্কুল পরিচালন কমিটির অনুমতি না নিয়েই ৪ মাস ধরে স্কুলে না আসার অভিযোগে কালিন্দ্রী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজিবুল হকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। ২ জুলাই যাতে ওই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জুন মাসের বেতন না তুলতে পারেন সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে নির্দেশ পাঠিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক পার্থসারথি ঝা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেন, “কালিন্দ্রী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে মিড ডে মিল থেকে শুরু প্রচুর বেনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি অনুমতি না নিয়ে ৪ মাসের বেশি সময় ধরে স্কুলে না যাওয়ার অভিযোগে ওই প্রধান শিক্ষককের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। ১২ জুলাই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে তদন্ত কমিটির সামনে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ওই স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক গোলাম রব্বানিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও বেতন বন্ধের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নাজিবুল হক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর বিধানসভা এলাকার মানুষদের কাছ থেকে কালিন্দ্রী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছিলেন মানিকচকের বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ২৪ জুন মন্ত্রী নিজেই হাজির হন ওই স্কুলে। সেখানে তিনি দেখতে পান একটি ঘরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে মিড ডে মিলের চাল। অথচ ৬ মাস ধরে স্কুলে মিড ডে-মিল বন্ধ। মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে, স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র ও তাদের অভিভাবকেরা অভিযোগ জানান, প্রধান শিক্ষক ৪ মাস ধরে স্কুলে যান না। সর্বশিক্ষা মিশন ও বিধায়ক কোটার টাকায় নির্মাণ কাজও নিম্নমানের বলে অভিযোগ পান। কাজ শেষ না হতেই প্রধান শিক্ষক ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের বেতন হলেও সই করানো হচ্ছে না। শংসাপত্র নিতে ১০ টাকা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন হলে ২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ ওই টাকার হিসাব নেই বলে অভিযোগ। এর পরে মন্ত্রী জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই নড়েচড়ে বসেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক। ২৬ জুন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের একটি প্রতিনিধি দল কালিন্দ্রী হাই স্কুলে তদন্তে যান। ওই প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট পাওয়ার পরে শনিবার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক কালিন্দ্রী হাই স্কুলের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ জারি করেন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের খবর শুনে মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “শুধু বেতন বন্ধই নয়, ওই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করা উচিত। প্রধান শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। সরকারি টাকা তছরুপ করে ও মিড ডে মিলের চাল তুলেও তা ছাত্রছাত্রীদের না খাইয়ে ওই প্রধান শিক্ষক ক্ষমাহীন অপরাধ করেছেন। ওঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক যে সংগঠনের সদস্য সেই প্রধান শিক্ষক অ্যসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক চঞ্চল ঝা বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা ওঁর পাশে দাঁড়াব না। আইন আইনের পথে চলবে।” |