মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ
আত্মহত্যায় এগিয়ে ভারতীয় যুবসমাজ, বলছে সমীক্ষা
ভারতে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বাড়তে থাকা আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক দিন ধরেই ভাবাচ্ছিল মনোবিদদের। তাঁদের উদ্বেগ বহু গুণ বাড়িয়ে দিল সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা, যা বলছে ভারতে যুবক-যুবতীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণই হল আত্মহত্যা।
এই সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষক বিক্রম পটেলের আশঙ্কা, পরিস্থিতির বদল না ঘটলে আর কিছু দিনের মধ্যেই ভারতের তরুণ প্রজন্মের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হয়ে উঠবে আত্মহত্যা। বিক্রমরা তাঁদের সমীক্ষায় দেখেছেন, যুবতীদের মধ্যেই আত্মহননের প্রবণতা বেশি। তবে যুবক-যুবতী উভয়ের ক্ষেত্রেই দারিদ্র কিংবা শিক্ষার অভাব আত্মহত্যার বড় কারণ নয়। বরং গরিব, নিরক্ষর ও অর্ধশিক্ষিতদের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যেই এই পথ বেছে নেওয়ার ঝোঁকটা বেশি। এবং উচ্চশিক্ষিতদের আত্মহত্যার ঘটনা সব চেয়ে বেশি ঘটে ভারতেই। সব মিলিয়ে ছবিটা যে ভারতের পক্ষে বেশ উদ্বেগজনক তা নিয়ে একমত বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো-র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও (২০১০) বলছে, এ দেশে প্রতি ঘণ্টায় ১৫টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’-র পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১০ সালে গোটা বিশ্বে ৯ লক্ষ মানুষ আত্মঘাতী হন। যাঁদের মধ্যে ভারতীয় ১ লক্ষ ৯০ হাজার। ২০১২-তেও যে আত্মহত্যার সেই প্রবণতা বেড়েই চলেছে, তা-ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত এই সমীক্ষায়।
কিন্তু কেন ভারতীয়রা এত বেশি আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন?
সমীক্ষায় দায়ী করা হয়েছে ‘পরিকাঠামোর অভাব’-কে। ‘আত্মহত্যাপ্রবণ’ মানুষদের জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে যে সামাজিক পরিষেবার ব্যবস্থা করা দরকার, তা ভারতে প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন রকম মানসিক অসুস্থতা, যা অনেক সময়েই মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়, তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আত্মহত্যার এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লাগাম টানতে তাই অবিলম্বে এই সব পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করা হয়েছে সমীক্ষা রিপোর্টে। আত্মহননের প্রকরণ শেখাতে নয়, আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতেই বরং দরকার কোনও ‘হেমলক সোসাইটি’।

পশ্চিমবঙ্গেই সর্বাধিক আত্মহত্যা, বলছে রিপোর্ট
প্রতি চার মিনিটে এ দেশে এক জন আত্মহননের পথ বেছে নেন। এঁদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে এক জন গৃহবধূ। আর রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সব চেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সদ্য প্রকাশিত সরকারি রিপোর্ট ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথস্ অ্যান্ড সুইসাইড ইন ইন্ডিয়া’ এমন তথ্যই জানাচ্ছে। যে সব রাজ্যে শিশু-কিশোরেরা সব চেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে, সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১১-তে দেশে আত্মহত্যার হার ০.৭ % বেড়েছে। ২০১০-এ দেশে মোট ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৯৯টি আত্মহত্যা ঘটেছিল। ২০১১-তে সেই সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৮৫। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক-এই পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে ৫৬.২% আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯-এর তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে ছিল, ২০১০-এ দ্বিতীয় স্থানে ও ২০১১-তে ফের প্রথম স্থানে রয়েছে। পুরুষ ও নারীর আত্মহত্যার পৃথক কারণ উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, সামাজিকও অর্থনৈতিক নানা চাপের জন্য চরম পথ বেছে নেন বেশিরভাগ পুরুষ। ব্যক্তিগত এবং আবেগতাড়িত হয়েই অনেক সময় মহিলারা আত্মহননের পথ বেছে নেন। তবে সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা কম বলেই জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.