সংশোধনাগারে বন্দিদের পাহারায় বন্দিরাই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
রাত বাড়তে থাকলেই বন্দিদের পাহারায় বসেন বন্দিরা। পঞ্চাশজনের পাহারায় বসেন পাঁচ জন। কে শৌচাগারে যাচ্ছেন, কেউ না ঘুমিয়ে অন্য কোনও ফন্দি আটছেন কি না সবদিকে তীক্ষ্ন দৃষ্টি। একটু এ দিক ও দিক হলে ডাক পড়ছে রক্ষীদের। শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারে এখন এটাই চিত্র। রক্ষীদের পাশাপাশি পাহারায় বন্দিরা। প্রত্যেককেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কাজের। দিন গেলে খাতায় জমা হচ্ছে ১৮ টাকা। উৎসাহিত বন্দিরাও। সংশোধনাগারের সুপার থুপদেন ভুটিয়া বলেন, “বন্দিদের আমরা নানারকম কাজের সুযোগ দিই। কাজ হিসেবে ১৮ থেকে ২৫ টাকা করে তাদের দিনহাজিরা দেওয়া হয়। এ বার তাদের দিয়ে রাত পাহারার কাজ করানো হচ্ছে। ডিউটি ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সেলের ভেতরে ক্রমান্বয়ে পাঁচজন করে ডিউটি করছে। সেলের বাইরে নিরাপত্তারক্ষী সবসময়ই থাকে। তবে ভেতরে পাঁচজন বন্দি সজাগ থাকায় কেউ পালানোর চেষ্টা করবে না।” জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারের ছাদ টপকে মাদক পাচার আইনে বন্দি ৪ জন পালিয়ে যায়। পরে তাদের মধ্যে আনারুল হক ও রাজু দাসকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু আকাশ গুরুঙ্গ এবং মাতৃকা উপরেতি নামে ২ বন্দিকে এখন ধরতে পারেনি পুলিশ। তা নিয়ে মামলা চলছে। ওই ঘটনার পর শিলিগুড়ি বিশেষ সংশোধনাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। ওয়াচ টাওয়ারগুলিতে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়। রাতে ছাদের উপরেও ২ জন নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়। এ ছাড়া প্রত্যেকটি সেলের সামনে একজন করে নিরাপত্তারক্ষী রাখা হয়। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে একটি সেলের জানালার লোহার শিক কেটে ওই চার বন্দি বেরিয়ে ছাদে ওঠে। সেখান থেকে তারা পালায়। সে বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একজন নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যেকটি সেলের জানালার লোহার শিক ঠিক রয়েছে কি না তা দেখে নেন। তার পরেই বন্দিদের পাহারার শুরু। জেলের এক কর্তার কথায়, “দীর্ঘদিন ধরে লোহার শিক কাটার কাজ করেছিল আকাশ গুরুঙ্গরা। যে দিন তা কাটার কাজ শেষ হয় ওইদিনই তারা পালিয়ে যায়। সেই সময় সেলের ভেতরে পাহারা সেভাবে না থাকায় বিষয়টি রক্ষীদের নজরে পড়েনি। এখন অনেকজন বন্দি ডিউটিতে থাকায় একসঙ্গে চক্রান্তে যুক্ত হওয়ার সুযোগ কম থাকে।” এক বন্দি বলেন, “সারাদিন এক ভাবে থাকতে ভাল লাগেনি। পাহারার কাজ পেয়ে খুশি। টাকাও জমছে। পরবর্তীতে কাজে লাগবে। সব ভেবে ভালভাবেই কাজ করছি।” |