গুরুঙ্গের সঙ্গে তিক্ততার আশঙ্কা |
জিটিএ ভোটে লড়া নিয়ে ‘বিতর্ক’ তৃণমূলে |
‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) ভোটে দল লড়বে কি না, তা নিয়ে ‘বিতর্ক’ দানা বেঁধেছে তৃণমূলের অন্দরে। তৃণমূল সূত্রের খবর, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, গোর্খা লিগ থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগদানকারী দার্জিলিং পাহাড়ের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ চাইছেন, জিটিএ-র ৪৫টি আসনেই প্রার্থী দেওয়া হোক। তাতে পাহাড়ে কিছুটা সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি হবে। পক্ষান্তরে তৃণমূলের প্রদেশ ও জেলার প্রথম সারির একাধিক নেতা বিমল গুরুঙ্গদের সঙ্গে ‘তিক্ততা’ তৈরির আশঙ্কায় ভোটে যোগ দেওয়ার পক্ষপাতী নন।
রবিবার শিলিগুড়িতে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের উপস্থিতিতে ঘরোয়া সভায় পাহাড় ও সমতলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জিটিএ ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে ‘বাগবিতণ্ডা’ হয়েছে বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। পাহাড়ের নেতা-কর্মীরা ৪৫টি আসনেই লড়াই করা ‘উচিত’ বলে মত দেওয়ায়, গৌতমবাবু তাঁদের প্রার্থী চিহ্নিত করে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। |
|
|
গুরুঙ্গের সঙ্গে তিক্ততার আশঙ্কা |
|
তবে তিনি জানিয়ে দেন, ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব নেবেন। ওই বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী দলীয় সতীর্থদের এটাও মনে করিয়ে দেন, যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে প্রায় দেড় দশক বাদে পাহাড়ে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হতে চলেছে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নিজেও প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতে জিটিএ গড়ে পাহাড়ের উন্নয়নের ব্যাপারে ‘সদিচ্ছা’ দেখাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ৪৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হলে পাহাড়ে মোর্চার সঙ্গে যে ‘সংঘাতের পরিবেশ’ তৈরি হতে পারে, সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারেননি গৌতমবাবুর মতো তৃণমূলের অনেক প্রথম সারির নেতাই। বৈঠকের পরে মন্ত্রী বলেন, “পাহাড়ের নেতা-কর্মীরা ভোটে দাঁড়ানোর জন্য তৈরি। কিন্তু সামগ্রিক পরিবেশ, পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জিটিএ ভোটে তৃণমূলের পাহাড়ের নেতা-কর্মীদের একাংশ যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, সে খবর মোর্চা শিবিরেরও অজানা নয়। তৃণমূল যেহেতু রাজ্যের প্রধান শাসক দল, সে জন্য ঘাসফুল প্রতীকে পাহাড়ের ৪৫টি আসনে দাঁড়াতে ‘অত্যুৎসাহী’ প্রার্থীর যে অভাব হবে না, তা মোর্চার নেতা-কর্মীরা অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে মানছেন। ভোটের ফল যাই-ই হোক, ভোটে দাঁড়ানোর সুবাদে অন্তত পাহাড়ের তিন মহকুমায় তৃণমূল অল্পবিস্তর সংগঠন গড়ে ফেলতে পারে বলেও মোর্চা নেতৃত্ব মনে করছেন। তাই মোর্চার তরফে প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্বকে ‘বার্তা’ পাঠানো শুরু হয়েছে।
মোর্চা অন্দরের খবর, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের একটি বড় অংশ মনে করেন, গত বিধানসভা ভোটে পাহাড় লাগোয়া সমতলের আসনে তাঁরা তৃণমূলকে ‘অলিখিত জোট শরিক’ হিসেবে সমর্থন করেছেন। সে জন্য জিটিএ ভোটে তৃণমূলও মোর্চাকে সমর্থন জানাতে পারে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার মন্তব্য, “আমাদের উপরে চাপ রাখতে এবং পাহাড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে তৃণমূলের একাংশ এখন জিটিএ ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করছে। আমরা মনে করছি, শেষ পর্যন্ত প্রদেশ তৃণমূল ভেবেচিন্তেই পদক্ষেপ করবে।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য বলেন, “যে কোনও দল ভোটে দাঁড়াতে পারে। এক-এক দলের এক-এক রকম রাজনৈতিক কৌশল থাকে। তবে জিটিএ ভোটে আমরা যে ৪৫টি আসনই পাব, সে কথা দলের সভাপতি বলে দিয়েছেন। আমরা সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।” |