|
|
|
|
কলকাতায় প্রতারণা, শিলিগুড়িতে গ্রেফতার |
স্কুটিতে চড়ে পালাতে গিয়ে গোয়েন্দা-জালে দুই বোন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও শিলিগুড়ি |
স্কুটি ছুটিয়ে চলেছেন এক তরুণী। পিছনে বসে আরও এক জন। দু’জনেরই পরনে সালোয়ার-কামিজ।
স্কুটির পিছনে তাড়া করছে একটি মোটরবাইক আর একটি টাটা সুমো। বেশ কিছু ক্ষণ ধাওয়া করার পরে স্কুটিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়িটি। গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে দুই তরুণীকে পাকড়াও করলেন কয়েক জন।
স্থান: শিলিগুড়ির মিলন মোড়। সময়: রবিবার সকাল।
হিন্দি ফিল্মের কায়দায় যাঁরা দুই তরুণীকে ধরলেন, তাঁরা কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার অফিসার। আর ধৃতদের নাম দীপশিখা চক্রবর্তী ও দেবশ্রী চক্রবর্তী বলে পুলিশ জানায়। নিউ আলিপুরের ওই দুই তরুণী আসলে দুই বোন। পরিচয় ভাঁড়িয়ে তাঁরা যথাক্রমে রিনি মিত্র ও তনুশ্রী মিত্র নামে প্রতারণা করেছেন বলে অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, ভুয়ো সংস্থা খুলে এবং নথি জাল করে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই তরুণীর বিরুদ্ধে। |
|
চম্পাসারি-মিলন মোড়ের এই বাড়িতেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন দুই তরুণী। |
এ দিনই দুই বোনকে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁদের ৪ জুলাই পর্যন্ত ‘ট্রানজিট রিমান্ড’ (এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া)-এ রেখে কলকাতার আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। বিকেলেই ধৃতদের নিয়ে কলকাতায় রওনা হয়ে যান গোয়েন্দারা। আজ, সোমবারেই দুই তরুণীকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলার কথা।
কী ভাবে টাকা আত্মসাৎ করা হত?
লালবাজার সূত্রের খবর, ওই দুই তরুণী বছরখানেক আগে ‘লারসেন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে একটি ভুয়ো সংস্থা খুলে প্রতারণার ফন্দি এঁটেছিলেন। কর্মী-অফিসার হিসেবে বেশ কয়েক জনকে সেই ‘সংস্থা’য় নিয়োগও করেন তাঁরা। সেই কর্মীদের নামে গাড়ি-বাড়ি কেনার জন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের যোধপুর পার্ক এবং বাঁশদ্রোণী এলাকার দু’টি শাখা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। লালবাজারের এক কর্তা জানান, গাড়ি কেনার ঋণের জন্য শহরের একটি নামী গাড়ির দোকানের কাগজপত্র জাল করা হয়েছিল। সেই জাল কাগজে দেখানো হয়, গাড়ির দামের একটি অংশ ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়েছে। এই তথ্য দেখিয়েই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাকি টাকা আদায় করা হয়েছিল। ব্যাঙ্ক সেই টাকা দেওয়ার পরে ওই গাড়ির দোকানের নামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্টে তা জমা দেওয়া হয়।
একই ভাবে ফ্ল্যাটবাড়ি কেনার জন্য বিভিন্ন প্রোমোটারের সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়ো নামে ফ্ল্যাট দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। গোয়েন্দারা তদন্তে জানতে পারেন, অনেক ক্ষেত্রেই যে-সব ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছিল, সেগুলির আসল মালিকেরাও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাননি। এ-পর্যন্ত ১৭টি ক্ষেত্রে ভুয়ো নামে ঋণ নেওয়ার হদিস পেয়েছে পুলিশ। ধৃতদের আইনজীবী মলয় ঘোষ বলেন, “প্রতারণার ঘটনায় মহম্মদ রিজানুর বলে এক জন জড়িত বলে ওই দুই তরুণীর দাবি। তদন্ত করলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।” গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঋণ দেওয়ার পরে ব্যাঙ্ক বুঝতে পারে, ওই দুই তরুণী আদতে ‘প্রতারক’। গত ৭ মার্চ পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। গোয়েন্দারা দুই প্রোমোটার-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করলেও দুই মূল অভিযুক্ত এত দিন গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন।
কয়েক দিন আগে পুলিশ খবর পায়, ওই দুই তরুণী শিলিগুড়ি শহরে লুকিয়ে থাকতে পারেন। কলকাতা থেকে গোয়েন্দাদের একটি দল শিলিগুড়ি চলে যায়। কলকাতা পুলিশের এক অফিসার জানান, শিলিগুড়ির চম্পাসারি-মিলন মোড় এলাকায় একটি বাড়ি দেখে প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল। পরে নজরদারি চালিয়ে সেখানে দুই অভিযুক্তের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। রবিবার সকালে ওই তরুণীরা স্কুটিতে চেপে পালানোর চেষ্টা করেন। ধাওয়া করে তাঁদের ধরে ফেলেন গোয়েন্দারা। দুই বোন কয়েক দিন আগে স্কুটিটি কেনেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
এ দিন ধৃতদের চম্পাসারি বাংলোয় হানা দিয়ে প্রচুর জাল প্যান কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। গোয়েন্দারা জানান, ওই সব প্যান কার্ডে দুই তরুণীর ছবি লাগানো থাকলেও সেগুলিতে বিভিন্ন নাম রয়েছে।
পুলিশের সন্দেহ, অন্যান্য ব্যাঙ্কের সঙ্গেও এই ধরনের প্রতারণা করে থাকতেন পারেন ধৃতেরা। |
|
|
|
|
|