কড়া ব্যবস্থার পথে তৃণমূল
মমতাকে তোপ, ‘বিদ্রোহ’ সোমেন-পত্নীর
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলে ‘বিদ্রোহে’র সুর শোনা গেল! প্রকাশ্যেই।
উপলক্ষ ছিল রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন। সেই উপলক্ষেই সাংসদ-স্বামী সোমেন মিত্রের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে গিয়ে রাজ্য সরকার এবং দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র। নাম না-করে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। প্রয়াত বিধানচন্দ্রের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বোঝাতে চাইলেন, চেয়ারে বসে ‘টাকা নেই, টাকা নেই’ বললে চলবে না! কাজ করে দেখাতে হবে!
গোষ্ঠী-কোন্দলে দল জেরবার। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কোনও কাজ করতে পারছেন না। ‘স্তাবকতা’ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। প্রকাশ্যে এমন কথাও রবিবার জানিয়ে দিয়েছেন সোমেন-জায়া। জনতার উদ্দেশে বলেছেন, “মানুষই এর বিচার করবেন। মনে হলে আপনারা এদের ছুড়ে ফেলে দিন।” বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ রাষ্ট্রপতি-পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ই ‘যোগ্যতম প্রার্থী’ বলে তাঁকে ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ সমর্থন করেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিখা দেবী। তাঁর কথায়, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, প্রণববাবুই যোগ্য প্রার্থী।” তবে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সোমেনবাবু। তাঁর বক্তব্য, “দল যা বলবে, তা-ই করব। দলে না-থাকলে তখন নিজের মত জানাতে পারব।”
বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে শিখা মিত্রের লেখা বই প্রকাশ করছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিধান ভবনে। —নিজস্ব চিত্র
শিখাদেবীর এ দিনের বক্তব্যের পরে স্বভাবতই তৃণমূলে তাঁর ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়ল। দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে শিখাদেবীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা পড়েছে বলে তৃণমূলের মহাসচিব ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দু’এক দিনের মধ্যেই শিখাদেবীর বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নিতে চলেছে দল। পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমাদের দলের বড় সম্পদ শৃঙ্খলা। ব্যক্তিস্বার্থে সিপিএমের ঘরে এক পা রেখে এবং কংগ্রেসের ঘরে আর এক পা রেখে যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙেন, তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।”
সরকারের কাজ এবং দলের বিরুদ্ধে এত ‘ক্ষোভে’র প্রেক্ষিতে তিনি কি দল ছাড়ছেন? শিখাদেবী এ দিন বলেছেন, “বিধান-স্মরণের দিনে এ ব্যাপারে কিছু বলব না। সময়ই এর জবাব দেবে।” তবে দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ বাড়ানোর জল্পনায় ইন্ধন দিয়ে আজ, সোমবার তৃণমূল সাংসদ, বিধায়ক ও নেতাদের সঙ্গে মমতার বৈঠকে উপস্থিত না-থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোমেন-শিখা। সোমেনবাবুর বক্তব্য, “নদিয়ায় আমার অন্য কর্মসূচি রয়েছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছি, যেতে পারব না।” ‘ব্যক্তিগত কাজে’ তাঁর পক্ষেও বৈঠকে থাকা সম্ভব নয় বলে জানান শিখাদেবী।
বস্তুত, তৃণমূলের তরফে ‘কড়া ব্যবস্থা’র ইঙ্গিত দিয়েই পার্থবাবু এ দিন এ-ও বলেছেন, “কারও ভাল না-লাগলে দল থেকে পদত্যাগ করে চলে যান। আমরা মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে ওই আসন (চৌরঙ্গি) লড়াই করে জিতে নেব! শিখাদেবী নিজের যোগ্যতায় নয়, কোটার টিকিট পেয়েছিলেন!”
তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজারহাটে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে তদানীন্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবু যে ফিনান্সিয়াল হাবের উদ্বোধন করেছিলেন, তার অধিকর্তা হিসেবে শিখাদেবী ‘সাম্মানিক’ পেতেন। হিডকো ওই হাব নিয়ে নেওয়ায় সেই সাম্মানিক বন্ধ হয়েছে। সেই ক্ষোভেই এবং জনসমর্থন হারিয়ে তাঁর এমন আচরণ। বলাই বাহুল্য, পার্থবাবুর বক্তব্যে তৃণমূল নেত্রীর ‘অনুমোদন’ আছে। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগের জবাবে সোমেনবাবু (শিখাদেবীর ফোন স্যুইচ-অফ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি) অবশ্য বলেন, “শিখা ফিনান্সিয়াল হাবের অধিকর্তা ছিলেন না।”
দীর্ঘ দিন ধরেই ‘বিদ্রোহী’ সাংসদ হিসেবে তৃণমূলে রয়ে গিয়েছেন কবীর সুমন। রেলের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর ‘অসন্তোষে’ রেলমন্ত্রীর পদ হারাতে হয়েছে দীনেশ ত্রিবেদীকে। স্থানীয় স্তরে শুভেন্দু অধিকারী বনাম শিউলি সাহার বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কাজ এবং দলের অন্দরের পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৩ মাসে এই ভাবে প্রকাশ্যে তোপ শিখাদেবীই প্রথম দাগলেন। বিধান ভবনে প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের উপস্থিতিতে শিখাদেবী এ দিন বলেন, “অনেক সমস্যার মধ্যে রাজ্য চালিয়েছিলেন বিধান রায়। কেন্দ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে রাজ্যের জন্য টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এক বারের জন্যও বলেননি, টাকা নেই, কী ভাবে কাজ করব?”
বামেদের রেখে যাওয়া ঋণ ও তার সুদের চাপে রাজ্যের উন্নয়নে কাজ করা যাচ্ছে না বলে মুখ্যমন্ত্রী বারবার যে দাবি করছেন, তাকে ‘অজুহাত’ বলেই মন্তব্য করে শিখাদেবীর মন্তব্য, “বিধানবাবু কখনও কাজ না-করতে পারার অজুহাত দেননি। মানুষ কাজ করার জন্যই চেয়ারে (মুখ্যমন্ত্রীর পদে) বসিয়েছে। এখন তো খালি শুনছি, টাকা নেই, কাজ করতে পারছি না!”
মিত্র-দম্পতির সঙ্গে ইদানীং নানা কারণে মমতার সম্পর্কের ‘অবনতি’ হয়েছে। বিধান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আয়োজনে বিধান ভবনের অনুষ্ঠান-মঞ্চে সোমেন-শিখার উপস্থিতিই যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক ছিল। সেই মঞ্চ থেকেই শিখাদেবীর ক্ষোভ, “যেখানে (তৃণমূলে) রয়েছি, সেখানে আমি কোনও কথা বলতে পারি না। নিজের কেন্দ্রের মানুষের জন্য কোনও কাজ করতে পারছি না।” স্বামীর অনুরোধেই বছর তিনেক আগে সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণ শিখাদেবীর। আশৈশব রাজনৈতিক পারিবারিক বৃত্তে বড় হওয়া শিখাদেবীর আক্ষেপ, “বিধানবাবু সংকীর্ণ রাজনীতি কখনও করেননি। এখন তো খালি আমি-ওরা চলছে!”
শুধু শিখার তোপ নয়, দুই জোট শরিকের মধ্যে ‘বিভাজন’ও এ দিন এনে ফেলেছেন প্রয়াত বিধানচন্দ্র! রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মুকুলবাবু এ দিনই মন্তব্য করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্রকে ঋণের বোঝা নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়নি। পাতিপুকুর আন্ডারপাস উদ্বোধন করতে দিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, “এই ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছেন।” সল্টলেকে তৃণমূলের এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও দাবি করেন, বিধানচন্দ্রের স্বপ্নকে সার্থক করছেন মমতাই। যার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.