পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য সংখ্যালঘু মন
বাজেটে ‘বেনজির’ বৃদ্ধি, সংরক্ষণে নয়া বিল
ঞ্চায়েত ভোটের আগে সংখ্যালঘু-মন জয়ে আরও দ্রুত পদক্ষেপ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক দিকে যেমন বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ‘নিশ্চিত’ করতে নতুন বিল আসছে, তেমনই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে-থাকা সংখ্যালঘু দফতরের বাজেট বরাদ্দ এক লাফে প্রায় ৭৩% বেড়ে যাচ্ছে! এক বছরে সংখ্যালঘু খাতে এমন বিপুল বৃদ্ধির নজির সাম্প্রতিক কালে নেই।
রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জমা পড়ার পরেই এ রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার বিল এনে ওবিসি-র আওতায় আর্থিক ভাবে অনগ্রসর মুসলিমদের জন্য সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ চালু করেছিল। তাদের সামনে তখন বিধানসভা ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু তৃণমূলের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যথাযথ সমীক্ষা না-করেই ওই সংরক্ষণের বিল নিয়ে আসায় মুসলিমদের বেশ কিছু গোষ্ঠী ‘বঞ্চিত’ হচ্ছিল। নতুন করে সমীক্ষা করে এ বার যে নতুন বিল আনতে চলেছে মমতার সরকার, তাতে রাজ্যের মুসলিমদের মধ্যে প্রায় ৯৮%-ই সংরক্ষণের আওতায় চলে আসবেন বলে সরকারি সূত্রের দাবি। বাম সরকারের মতোই মমতার জমানাতেও সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিলটি বিধানসভায় পেশ করবে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর।
ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের জন্য যা ব্যয়বরাদ্দ রেখেছিলেন, দ্বিতীয় বছরে তার ৭৩% বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন। ওই দফতরের জন্য বরাদ্দ এ বার ৫৭০ কোটি টাকা। যদিও সংখ্যালঘু দফতরের বাজেট-বিতর্ক শেষ পর্যন্ত ‘গিলোটিনে’ চলে যাওয়ায় ওই বরাদ্দ নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার সুযোগ থাকছে না।
তবে পরিষদীয় সূত্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে ভাবে সংখ্যালঘু ‘কল্যাণে’ লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে চলেছেন, সংরক্ষণের নতুন বিলটি নিয়ে বিতর্কের সময় তা-ই হয়ে উঠবে আলোচনার বিষয়বস্তু। মুখ্যমন্ত্রীর বহু পদক্ষেপের ‘যৌক্তিকতা’ নিয়ে তাদের প্রশ্ন থাকলেও সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে তাঁর কর্মকাণ্ডকে তীব্র আক্রমণের পথে যেতে অসুবিধায় পড়ছে বিরোধী বামফ্রন্টও।
রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬% সংখ্যালঘু। চার বছর আগের পঞ্চায়েত ভোট থেকে শুরু করে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের সমর্থন পেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতাই। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে সংখ্যালঘুদের প্রতি তাঁর তরফে ‘পাল্টা বার্তা’ অব্যাহত রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ইমাম এবং মোয়াজ্জেনদের জন্য মাসিক ভাতার বন্দোবস্ত করেছেন তিনিই। সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যে গত কয়েক মাসে পুরসভার কয়েকটি নির্বাচন এবং বিধানসভার উপনির্বাচনে এই পরিস্থিতির ‘রাজনৈতিক ফায়দা’ তুলে ভোটের হার বাড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি।
কিন্তু মমতা যে তাঁর পথ থেকে সরছেন না, নতুন বিল এবং ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানোতেই তা স্পষ্ট বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা।
‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (আদ্যর দ্যান শিডিউল্ড ক্লাসেস অ্যান্ড ট্রাইব্স) (রিজার্ভেশন্স ইন ভ্যাকেন্সিজ অ্যান্ড পোস্ট্স) বিল, ২০১২’ শীর্ষক বিলটিতে মোট ১৪৩টি গোষ্ঠীকে ওবিসি-র আওতায় এনে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এই ১৪৩টি গোষ্ঠীকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে ‘ক্যাটিগরি এ’ (যারা বেশি অনগ্রসর এবং যাদের জন্য ১০% সংরক্ষণ) এবং ‘ক্যাটিগরি বি’র (যাদের জন্য ৭% সংরক্ষণ) মধ্যে। রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, “মুঘল, পাঠান, আফগান এবং সৈয়দ ছাড়া প্রায় সব জনগোষ্ঠীই এর ফলে ওবিসি-র আওতায় আসবে। তারা ক্যাটিগরি অনুযায়ী সংরক্ষণের সুযোগও পাবে।” প্রসঙ্গত, রাজ্যে এখন তফসিলি জাতির জন্য ২২%, উপজাতির জন্য ৬% এবং ওবিসি-র জন্য ১৭% সংরক্ষণই আছে। মমতার সরকার ওবিসি-র আওতায় আরও বেশি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে সুযোগ দিতে চলেছে। বাম আমলে পাশ-হওয়া বিলেও ওবিসি-র জন্য ১৭% সংরক্ষণই ছিল। রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএম বিধায়কের বক্তব্য, “দু’টো ক্যাটিগরির মধ্যে কিছু কিছু করে গোষ্ঠীকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। মোদ্দা কথা হল, সংরক্ষণের আওতায় জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।” পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংখ্যালঘুদের ‘বার্তা’ দেওয়াই যে পদক্ষেপের উদ্দেশ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.