যৌতুক বাবদ সোনার হার দিতে না পারায় ঘুমন্ত স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠল স্বামী-সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মনীষা মণ্ডল (১৯)। তাঁর শ্বশুরবাড়ি হাসনাবাদের কুমিরমারি গ্রামে। শনিবার রাতে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মনীষাদেবীকে স্বামী সুকান্ত মণ্ডল বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে সেখানেই মৃত্যু হয় মনীষাদেবীর। মনীষাদেবীর বাবা শিবপদ হালদার পণের জন্য তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বধূর স্বামী, শাশুড়ি, তিন জা, শ্বশুরবাড়ির দুই জামাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে ধরমবেড়িয়া গ্রামের মনীষার সঙ্গে বিয়ে হয় পেশায় হিঙ্গলগঞ্জ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী কুমিরমারি গ্রামের সুকান্ত মণ্ডলের। মনীষার পরিবারের অভিযোগ, বিয়েতে পণ বাবদ সব কিছু দিলেও খাট ও এক ভরি সোনার হার দেওয়া বাকি ছিল। সেই বাকি পণের দাবিতে নাছোড় জামাই ও তার পরিবারের লোকেরা মনীষাকে মারধরের পাশাপাশি খেতে দিত না বলেও অভিযোগ। প্রতিবেশীরা একাধিকবার প্রতিবাদ জানালেও মণ্ডল পরিবার তা কানে তুলত না।
শনিবার রাত ১০টা নাগাদ মণ্ডল বাড়িতে মনীষার চিৎকার শুনে পাশের একটি ক্লাবের ছেলেরা শ্বশুরবাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাঁদের দাবি, বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মত্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর আগুনে পোড়া দেখছে সুকান্ত মণ্ডল। পাশেই দাঁড়িয়ে শাশুড়ি আশালতা মণ্ডল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ মনীষাদেবীকে উদ্ধার করার পর সুকান্ত-সহ মণ্ডল পরিবারের লোকজনদের বেধড়ক পেটায়। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই রাতেই শিবপদবাবু লোকজন নিয়ে কুমিরমারি গ্রামে যান। মনীষার চিকিৎসার জন্য তাঁদের সঙ্গে সুকান্তকেও হাসপাতালে আসতে হয়। হাসপাতালে মনীষার মৃত্যু হলে সুকান্ত সেখান থেকে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
রবিবার দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে শিবপদবাবু বলেন, “আর্থিক কারণে সোনার হার ও খাট দিতে পারিনি। বলেছিলাম হাতে পয়সা এলেই দিয়ে দেব। ওদের সে কথায় বিশ্বাস হল না। আমার মেয়েটাকে খুন করল। ওদের কঠিন শাস্তি চাই।”
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। |