অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির রাধানগর গ্রামের এক কিশোরীর। পুলিশ জানিয়েছে, ফুলেশ্বরী মণ্ডল (১৪) নামে ওই কিশোরীকে সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সেই অপমানেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার বাসিন্দা জাকির মল্লিক নামে এক যুবককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ফুলেশ্বরীর সঙ্গে কয়েকদিন আগে জাকিরের ফোনে আলাপ হয়। গত ২৬ জুন সকালে রাধানগর হাটের কাছে টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি ফুলেশ্বরী। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সেই দিনই জাকিরের সঙ্গেই ফুলেশ্বরী হাওড়ার গাদিয়াড়াতে যায়। তার পরের দিন শ্যামপুরের ৫৮ গেট জেটিঘাট থেকে লঞ্চে ওঠে তারা দু’জনে। লঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ওই কিশোরী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালির বুড়ুল ঘাটে নামার পরে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই অবস্থাতেই তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল জাকির। কিন্তু নৌকার অন্য যাত্রীদের সন্দেহ হওয়ায় তারা জাকিরকে ধরে ফেলেন। এর পরে তাকে নোদাখালি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের দাবি, ওই কিশোরী তখন থানায় জানায়, তাকে ধর্ষণ করেছে জাকির। সঙ্গে সঙ্গে জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়।
ফুলেশ্বরীকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে ২৮ জুন মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যান ওই কিশোরীর মা গৌরীদেবী। স্বামীহারা গৌরীদেবী দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। বড় ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। আর একটি একেবারেই ছোট। অভাবের সংসারে স্থানীয় স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না করে কোনওরকমে সংসার চালান তিনি। তাঁর কথায়, “কী ভাবে আমার মেয়ের সঙ্গে ওই যুবকের আলাপ হয়েছিল তা জানি না। কেন ওই অল্প পরিচিত যুবকের সঙ্গে মেয়ে সেই দিন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তা-ও জানি না। মেয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে চুপ করে বসে থাকত। তাই বেশি প্রশ্নও করতে পারিনি।” গত মঙ্গলবার তিনি কুলপি থানায় মেয়ে নিখোঁজ বলে ডায়েরি করেছিলেন। তারপরে পুলিশই তাঁকে খবর দেয় যে, ফুলেশ্বরীকে নোদাখালিতে পাওয়া গিয়েছে।
মেয়েকে নিয়ে ফেরার পরে শনিবার গৌরীদেবী প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পান, তাঁর মেয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তাঁর কথায়, “মেয়ে বাড়ি ফেরার পরে ওই দিন আমি কাজে বেরিয়েছিলাম। বাড়িতে অন্য কেউও ছিল না। আচমকা মেয়ে গায়ে আগুন দেয়।” ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে পাড়ার লোকজন ছুটে যান। দরজা খুলতেই ওই কিশোরী ছুটে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, জাকিরের সঙ্গে ওই কিশোরীর ঠিক কী সম্পর্ক ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গৌরীদেবী বলেন, “হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে মেয়ে সব সময় মনমরা হয়ে থাকত। কারও সঙ্গে কথা বলত না। তা বলে এ ভাবে আত্মঘাতী হবে ভাবতে পারিনি।” কুলপির রামকৃষ্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কার্তিক মণ্ডল বলেন, “ওই কিশোরী মারাত্মক মানসিক আঘাত পেয়েছিল। সেই কারণেই গায়ে আগুন দেয়।” |