পাচারকারীদের কাছ থেকে ২৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করল সুতি থানার পুলিশ। ভিন রাজ্য থেকে কম দামে গাঁজা কিনে এই রাজ্যে চড়া দামে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ওই গাঁজা পাচার করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ কর্তারা।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর রবিবার বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় সুতি থানার পুলিশ ২৫০ কিলোগ্রাম গাঁজা-সহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। অসমের ডিমাপুর থেকে ওই গাঁজা বেলডাঙায় নিয়ে আসা হচ্ছিল। দুটি গাড়িতে ওই গাঁজা নিয়ে আসার সময়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ধৃতদের মধ্যে ৪ জন মহিলা রয়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০-১২ দিন আগে বেলডাঙার মেছোবাজারের বাসিন্দা চায়না বিবি তাঁর সহোদর তিন বোন সাকিরুন বিবি, পূর্ণিমা বিবি, রুবিনা বেওয়া ও এক ভাই রহিদ শেখ-সহ মোট ১০ জন অসমের ডিমাপুরে যান। সেখান থেকে ২৫০ কিলোগ্রাম গাঁজা কিনে ট্রেনে ও বাসে শিলিগুড়ি পৌঁছায়। শিলিগুড়ি থেকে দু’টি দামি গাড়িতে তারা বেলডাঙা ফিরছিল। আগাম খবর পেয়ে সুতি থানার ওসি মহম্মদ জামালউদ্দিনের নেতৃত্বে এক দল পুলিশ আহিরন সেতুর কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে অপেক্ষা করছিলেন। গাড়ি দু’টি থামিয়ে তল্লাশি চালাতেই ওই গাঁজা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয় দু’টি গাড়ির চালক-সহ ১২ জনকে। |
পুলিশ জানায়, অসমে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কিলো দরে ওই গাঁজা কিনে মুর্শিদাবাদে তিন থেকে চার হাজার টাকা কিলো দরে তা বিক্রি করে ওই চক্র। চায়নাবিবি বেলডাঙার বাসিন্দা হলেও বাকি চার ভাইবোন বহরমপুরের কাশিমবাজারের কালিকাপুর ও পঞ্চাননতলায় বাস করে। এ ছাড়াও ওই দলে নওদা, হরিহরপাড়া, বেলডাঙা ও বহরমপুর থানা এলাকার ৫ জন রয়েছেন। গাড়ির চালক গুড্ডু শেখ ও মন্টু দাসের বাড়ি শিলিগুড়ি। পুলিশ দাবি করেছে, ধৃতেরা জেরা স্বীকার করেছে, গত ৫-৭ বছর ধরে গাঁজা পাচারের সঙ্গে তারা জড়িত। দু’জন চালকও দীর্ঘ দিন ধরে পাচারের কাজে গাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকে বলেও পুলিশ জেনেছে। পুলিশ জানায়, ওই গাঁজা পাচার চক্রের চায়নাবিবির স্বামী সাত্তার শেখ ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা। এর আগে পুলিশ চায়নাবিবির বেলডাঙার বাড়ি থেকে চোরাই সোনা উদ্ধার করেছে। একই ভাবে বোন সাকিরন বিবির স্বামী সেন্টু শেখও ডাকাতির মামলায় বর্তমানে বহরমপুরের জেল হেফাজতে রয়েছে।
এসপি বলেন, “অন্য একটি ঘটনায় হরিহরপাড়া থানার পুলিশ দুটি ওয়ান শটার পিস্তল-সহ ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। ওই ঘটনায় কালু শেখ ও রাজ্জাক শেখ নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ডোমকল থানার জোতকানাই গ্রাম থেকে পুলিশ এজারুল শেখ নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে। ওই ঘটনায় ১৮টি শকেট বোমা ও ৩৮০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ফেনসিডিল পাচার চক্রের পাণ্ডা মাফিরুল বিশ্বাস পালিয়ে যায়। তার খোঁজে পুলিশের তল্লাশি চলছে।” ডোমকল ও হরিহরপাড়ার ঘটনায় ধৃত ৩ জনকে বহরমপুরের সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুতীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বলে সরকারি আইনজীবী পুরুষোত্তম কেশরী জানান। অন্য দিকে গাঁজা-কাণ্ডে ধৃতদের জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এসপি বলেন, “খুন-জখম রুখতে হরিহরপাড়া থানার জন্য যেমন পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে, তেমনি সীমান্তে ফেনসিডিল-সহ মাদক পাচারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। শনিবার ওই দু’টি থানা এলাকাতেও পুলিশের সাফল্য মিলেছে।” এসপি-র কথায়, “সীমান্তে ফেনসিডিল পাচারের সময়ে পুলিশ ও বিএসএফকে ঠেকাতে সকেট বোমা ব্যবহার করে থাকে পাচারকারীরা। আগাম খবর পেয়ে ডোমকল থানার পুলিশ শনিবার মাফিরুল বিশ্বাসের বাড়িতে হানা দেয়। মাফিরুল পালিয়ে গেলেও ওই বাড়িতে থেকে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তল্লাশি চালিয়ে ১৮টি তাজা সকেট বোমা ও ৩৮০০ বোতল ফেনসিডিল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।” ৭০০ গ্রাম হেরোইন-সহ রাজকুমার ভুঁইমালি নামে এক যুবককের রবিবার সাগরদিঘি থেকে ধরে পুলিশ।
|