গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া নিয়ে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার নশিপুর পশ্চিম ও পাড়সাহেবনগর গ্রামে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪ জন। শনিবার সকাল থেকে ওই দু’টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পাড়সাহেবনগরের মুকুল শেখ গুরুতর জখম অবস্থায় লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। দু’টি গ্রামের সংযোগকারী সেতুর পথ কেটে দেওয়া হয়েছে বলে নশিপুর পশ্চিমগ্রামের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
রবিবারও ফের এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা উত্তেজিত হয়ে এদিন বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে দেন বলেও অভিযোগ। রানিতলা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে যান ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। কিন্তু সমস্যা সহজে মেটেনি। দু’পক্ষের লোকজন বোমা-ইট নিয়ে গ্রামের দু’দিকে অপেক্ষা করতে থাকেন। তবে এই দিন কেউ আহত হননি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রামে উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।” |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে বিদ্যুতের খুঁটি পোতা নিয়ে ওই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে গত ছ’মাস ধরে গণ্ডগোল চলছে। খাড়ি সেতুর দু-দিকে পাশাপাশি এই দু’টি গ্রামের মধ্যে নসিপুর পশ্চিমগ্রাম খড়িবোনা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। পাড়-সাহেবনগর রয়েছে নশিপুর পঞ্চায়েতের অধীনে। পাড়সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দাদের ব্লক-থানা-বাজার এলাকায় যেতে হলে সংযোগকারী একমাত্র ওই সেতুটি পেরিয়ে নসিপুর পশ্চিমগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রশিদ হাসান বলেন, “গত ছ’মাস হল পাড়সাহেবনগরে বিদ্যুৎ এসেছে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, নসিপুর পশ্চিমগ্রামের ১১ হাজার ভোল্টের ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুতের তার টেনে পাড়সাহেবনগরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সেই মতো বিদ্যুতের তারও টানা হয়। কিন্তু সেই তার রাতের অন্ধকারে নশিপুর পশ্চিমগ্রামের বাসিন্দারা কেটে দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত পূর্ব নাজিরচক গ্রামের ১১ হাজার ভোল্টের ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরেই পাড়সাহেবনগর গ্রামের অন্ধকার ঘোচে।”
কিন্তু নশিপুর পশ্চিমগ্রামের একাংশে এখনও পর্যন্ত অন্ধকারই রয়েছে। সেই কারণেই এখন নশিপুর পশ্চিমগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তার টানার সিদ্ধান্ত হলেই সমস্যা শুরু হয়। কারণ, ওই গ্রামে যে জমির উপর দিয়ে ওই খুঁটি বসানোর কথা, সেই জমির মালিক পাড়সাহেবনগরের বাসিন্দা। তিনি তাঁর জমির উপর বিদ্যুতের খুঁটি বসাতে আপত্তি তোলেন। শনিবার তা নিয়েই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দু’টি গ্রামের মানুষ।
এদিকে সেতুর রাস্তা কেটে দেওয়ায় শনিবার গভীর রাতে সোহাগী বেওয়া নামে সর্পদষ্ট এক প্রৌঢ়াকে ঘুরপথে নিয়ে যেতে হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এই সব কিছুর বহিঃপ্রকাশ ঘটে ফের এদিন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই দু’টি গ্রাম। শেষ পর্যন্ত মহকুমা পুলিশ অফিসারের উপস্থিতিতে বিডিও কৌশিক মুখোপাধ্যায় সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন। বিডিও বলেন, “দু’টি গ্রামের সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছে। কিন্তু রাত পর্যন্ত কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।” সিদ্ধান্ত হয়েছে রানিতলা থানায় সোমবার সব পক্ষকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসা হবে। গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের নদিয়া-মুর্শিদাবাদের অধিকর্তা তাপস দাস বলেন, “কার জমির উপর খুঁটি বসবে, সে ব্যাপারে ব্লক প্রশাসন যা বলে আমরা তাই করি। তবে এখন ওই এলাকায় দু’টি গ্রামের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তা না মেটা পর্যন্ত কাজ স্থগিত।”
|