দুই ব্যবসায়ী খুনে রবিবার এক প্রৌঢ়কে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম বিমল সরকার। তার বাড়ি করিমপুরের জয়নাবাদে।
শুক্রবার রাতে তেহট্টের নাজিরপুর বাসস্ট্যান্ডে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন পরিতোষ বিশ্বাস (৪৫) ও কানাইলাল বিশ্বাস (৬৫)। তাঁরা দু’জনেই তেহট্টের মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা। পরিতোষবাবু নাজিরপুর বাজার কমিটির সহ-সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি ছিটকা পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য ও নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার মৃগি গ্রামের সালিশিতে গিয়েছিলেন পরিতোষবাবু ও কানাইবাবু। মোটরবাইকে ফেরার সময়ে করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে নাজিরপুর বিদ্যালয়ের সামনে তাদের লক্ষ করে গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। মোটরবাইক থেকে পড়ে যান দু’জনেই। দুষ্কৃতীরা তাঁদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান পরিতোষবাবু। কানাইবাবুকে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান পথেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। |
কানাইবাবুর স্ত্রী শেফালীদেবী বলেন, ‘‘ওঁকে কেউ কেন খুন করবে? ওঁর সঙ্গে কারওর কোনও শত্রুতা নেই। কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ অন্য দিকে, পরিতোষবাবুর দাদা পরিমল বিশ্বাস বলেন, “একটা জমি নিয়ে স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। বিষয়টি পুলিশ-আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তার জেরেই আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। আমার ভাই সিপিএমের সক্রিয় কর্মী। ওর মৃত্যুর সেটাও একটা কারণ।’’ পরিমলবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ জোর করে মৃতদেহ তুলে নিয়ে যায়। আমাকে ও আমার পরিবারের বেশ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধরও করা হয়েছে।’’ যদিও এমন অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ।
সিপিএমও এই খুনের ঘটনায় দায়ী করছে তৃণমূলকেই। তেহট্টের সিপিএম বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলের অভিযোগ, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের দলের ওই দু’জনকে খুন করেছে। পরিতোষবাবু ওই এলাকায় অত্যন্ত ভাল সংগঠক ও নেতা ছিলেন। আর কানাইবাবুও আমাদের দলের সক্রিয় সমর্থক। সামনে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সন্ত্রাস তৈরি করতেই ওদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে দোষীদের শাস্তির দাবি করেছি।’’
সিপিএমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তেহট্ট-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করছে সিপিএম। ওই দু’জনের মৃত্যুর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’’
এই খুনের ঘটনায় শনিবার সকালে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন কানাইবাবুর ছেলে মলয় বিশ্বাস। পুলিশ জানিয়েছে ইতিমধ্যে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন,‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে জমি জায়গা সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই খুন। এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’’
শুক্রবার রাতে ওই ঘটনার পর থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে দফায় দফায় করিমপুর-কৃষ্ণনগর রাজ্যসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে অবশ্য পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে জোড়া খুনের ঘটনায় এখনও থমথমে নাজিরপুর। শনিবার বাজারও বন্ধ রেখেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। |