|
|
|
|
‘ভাল রক্ষণই কিন্তু জয়ের মঞ্চ তৈরি করে দেয়’ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
‘নেতা’ শব্দটা হালফিল খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে জিয়ানলুইজি বুফোঁর ক্ষেত্রে শব্দটা না ব্যবহার করে থাকা যায় না। ৩৪ বছরের ইতালীয় অধিনায়কের সামনে এখন নতুন স্বপ্নআর এক কিংবদন্তি গোলকিপার দিনো জফ-কে ছোঁয়া। জফই একমাত্র ইতালীয় ফুটবলার যিনি ইউরো এবং বিশ্বকাপ জিতেছেন। কিয়েভে কাপ-জয়ের লড়াইয়ে নামার আগে বুফোঁ কথা বললেন ফাইনাল নিয়ে, মারিও বালোতেলি নিয়ে, আন্দ্রে পির্লোর অসাধারণ মরসুম নিয়ে।
প্রশ্ন: ইংল্যান্ড এবং জার্মানিকে হারানোর পর টিমের নেতা হিসেবে কতটা গর্ব আপনার হচ্ছে?
বুফোঁ: সত্যি বলতে কী, ফলাফল যে এ রকম হবে আমরা ভাবতেই পারিনি। অপ্রত্যাশিতই বলা যায়। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা খুশি। আমরা এই টুর্নামেন্টে এসেছিলাম ফুটবলের বাইরের নানা রকম ঝঞ্ঝাট কাঁধে নিয়ে। তা ছাড়া ইউরোর প্রস্তুতির জন্য যে ফ্রেন্ডলি ম্যাচগুলো আমরা খেলেছিলাম সেখানেও ভাল পারফর্ম করতে পারিনি। আমরা তো ভয়ই পাচ্ছিলাম যে টুর্নামেন্টটা না খারাপ যায়। কিন্তু কোচের সাহায্যে একদম ঠিকঠাক পরিবেশটা টিমের মধ্যে তৈরি হয়েছে। আর সেটাই বলতে পারেন আমাদের ফাইনালে তুলেছে।
প্র: আপনি বলেছেন যে দেশের মানুষকে ও ভাবে আনন্দ করতে দেখে আপনার খুব ভাল লেগেছে। একই সঙ্গে এটাও কি আপনার মনে হচ্ছে না যে, দেশের হারানো সম্মানটা আবার ফিরে পাওয়া গেল?
বুফোঁ: আমি খুশি তো বটেই। দেশবাসীকে এর চেয়ে বড় উপহার আমরা আর কী দিতে পারতাম? ওঁদের আনন্দটা আমাদের মধ্যেও ছড়িয়ে গিয়েছে। কারণ উৎসবের যে ছবিগুলো আমরা দেখেছি, তার পর প্রভাবিত না হয়ে থাকা যায় না। ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড গর্ব হচ্ছে।
প্র: এই যে ইতালি এত সুন্দর ফুটবল খেলছে, তার পিছনে অনেকটাই সিজার প্রান্দেলির ভূমিকা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কোচ হিসেবে উনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ আপনাদের ড্রেসিংরুমে? ফুটবলারদের উপর ওঁর কোচিংয়ের প্রভাবটাই বা কেমন?
বুফোঁ: উনি অসাধারণ কাজ করছেন। ওঁর কাজের পদ্ধতি যে এত সাফল্য পাচ্ছে তার কারণ হল উনি ক্লাব ঘরানার কোচিংয়ে অভ্যস্ত। যিনি কিনা প্রত্যেক দিন নতুন কিছু না কিছু শেখান। ওঁকে দেখে মনেই হয় না উনি জাতীয় টিমের কোচিং করাচ্ছেন। ওঁর সবচেয়ে বড় গুণ হল, ওঁর ভাবনাচিন্তাগুলো অনায়াসে ফুটবলারদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পারেন।
প্র: বালোতেলিকে নিয়েও প্রান্দেলি যথেষ্ট ধৈর্য দেখিয়েছেন। বিশেষ করে একটা সময় বালোতেলি গোল পাচ্ছিলেন না। মানুষ হিসেবে বালোতেলি কেমন?
বুফোঁ: মারিও টিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য। আসলে ও ভেতরে যা, বাইরেও তাই। আমি অনেক বার বলেছি যে ওর বয়স কম। তা ছাড়া ও যখন যা ভাবে, তা-ই করে। তাই আমার মনে হয় ওর কয়েকটা ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যাবতীয় মশলা বালোতেলির মধ্যে আছে। তবে এটাও ঠিক, ও কোন পথে চলবে সেটা ওকেই ঠিক করতে হবে। জার্মানির বিরুদ্ধে যে দুটো গোল ও করল, এক কথায় অসাধারণ। আর শেষ পর্যন্ত যদি আমরা টুর্নামেন্টটা সফল ভাবে শেষ করি, মারিওকে বেশির ভাগ কৃতিত্বটাই দিতে হবে। তবে সবার উপরে থাকবেন কোচ, যিনি মারিওকে এত দিন সামলেছেন।
প্র: ইতালির ডিফেন্সের বিশেষত্ব কী?
বুফোঁ: এটা বলতেই হবে যে, রক্ষণটা আমরা খুব ভাল করছি। আর আপনি জাতীয় দলেই খেলুন বা ক্লাবে, জয়ের মঞ্চটা কিন্তু ভাল ডিফেন্সই তৈরি করে দেয়। এই যে এখন স্পেনের মুখোমুখি হবো, ওদের ডিফেন্সও বেশ ভাল। খুব কম গোল খেয়েছে। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে ওদের বেশি সুযোগ তৈরি করতে না দেওয়া। আর গোল না খাওয়া।
প্র: কিন্তু ম্যাচের ভাগ্য তো অনেকটাই নির্ভর করে থাকবে আন্দ্রে পির্লো এবং জাভি হার্নান্দেজের উপর। ফুটবলার হিসেবে যাঁরা দু’জনেই বিরল প্রজাতির।
বুফোঁ: দু’জনেই চ্যাম্পিয়ন। তবে কে এগিয়ে সেটা বোধহয় আমার বলাটা ঠিক হবে না। কারণ আমি যা-ই বলি, সেটা কখনওই ওদের মতো চ্যাম্পিয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। তবে এটা ঠিক, আন্দ্রের মরসুমটা এ বার যে ভাবে গিয়েছে সেটা অনেকেরই যায়নি।
প্র: স্পেনকে আপনারা গ্রুপ পর্বেও খেলেছেন। কিন্তু এই ম্যাচটা কতটা আলাদা?
বুফোঁ: সেটা বলা মুশকিল। আমার তো মনে হয় একই। তবে কোনও টিমকে যদি আমি ফাইনালে এড়াতে চাইতাম, সেটা স্পেনই হতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওরাই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী টিম। আর এটাও সত্যি, ফাইনালে উঠলে স্পেনকে এড়ানো মুশকিল।
প্র: ১৯৬৮ সালে আপনারা শেষ বার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। অনুভূতিটা ঠিক কী রকম হবে যদি সেই ইতিহাস এ বার ফিরে আসে?
বুফোঁ: আমার কাছে ব্যাপারটার মর্যাদা আলাদা হবে। একটা বিশ্বকাপের পাশে একটা ইউরোপ সেরার ট্রফি রাখতে কে না চায়? আর যদি সেটা হয়, তা হলে সেটা হবে আমার ৩৪ বছর বয়সে। মাঝের সময় অনেক বার চোটে ভুগেছি। কিন্তু তবু টিমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে অসুবিধে হয়নি। ৩৪ বছরেও ফুটবল খেলাটা কিন্তু মুখের কথা নয়। অনেকেই তা পারে না। আর আমার দেশবাসীর কথা বলি, ইউরোটা যদি আমরা তাঁদের জন্য জিততে পারি তা হলে মনে হয় সে জিনিসের আর কোনও তুলনা হবে না। সবচেয়ে বড় উপহার সেটাই হবে। |
|
|
|
|
|