তিন শিক্ষকই গরহাজির, ফিরল পড়ুয়ারা
স্কুলে হাজির হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করল পড়ুয়ারা। শিক্ষকেরাই এলেন না। ফলে পড়াশোনা না-করেই বাড়ি ফিরে গেল তারা। খেতে পেল না মিড ডে মিলও। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের ফটিকগাছি প্রাথমিক স্কুলে। ঘটনার তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাওড়া জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি অজয় ভট্টাচার্য।
স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী জনা সত্তর। শিক্ষক ৩ জন। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে শুরু করলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক-সহ বাকি দু’জন শিক্ষক আসেননি। স্কুল ঘরের দরজায় তালা মারা ছিল। শিক্ষকদের না-আসার খবর পেয়ে খবর শুনে নস্করপুর পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তথা স্কুলের ‘গ্রাম শিক্ষা কমিটি’-র সভাপতি নরেন সাউ তড়িঘড়ি চলে আসেন। তাঁর কাছে একটি চাবি ছিল। পড়ুয়ারা রোদে ঘোরাঘুরি করছে দেখে তিনি তালা খুলে দেন। পড়ুয়ারা যে যার শ্রেণিতে বসে। কিন্তু সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিক্ষকেরা আসেননি। শেষ পর্যন্ত নরেনবাবু অভিভাবকদের খবর দেন, যাতে তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
ইতিমধ্যে নরেনবাবুর কাছ থেকে খবর পেয়ে স্কুলে হাজির হন শিক্ষা পরিদর্শক বিভাগের অধীন নস্করপুর পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘শিক্ষাবন্ধু’ গোপাল ঘোষ। পরিস্থিতি দেখে তিনি বলেন, “তাজ্জব ব্যপার! প্রচণ্ড গরমে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে এসেছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক-সহ বাকি শিক্ষকের পাত্তা নেই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কড়া রিপোর্ট দেব।”
আগে শনিবার স্কুলে মিড ডে মিল হত না। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশের ভিত্তিতে চলতি সপ্তাহ থেকে শনিবারেও মিড ডে মিল চালু হয়েছে। সেই মতো মিড ডে মিল রান্না করার জন্য স্কুলে এসেছিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা। তাঁদেরই এক জন মৌসুমী দলুই বলেন, “শুধু চাল আমাদের কাছে আছে। রান্নার বাকি জিনিস গুদামঘরে তালা মারা। শিক্ষকেরা না-আসায় খোলা যায়নি। মিড ডে মিল রান্না হবে কী ভাবে?”
ক্ষুব্ধ অবিভাবকদের মধ্যে নারায়ণ কোলে বলেন, “অধিকাংশ দিনই স্কুলের তিন জন শিক্ষকের কেউ না কেউ গরহাজির থাকেন। এ দিন কেউই এলেন না।” আর এক অভিভাবক টুম্পা দলুই বললেন, “মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে নিশ্চিন্তে আছি। ফের দু’টোর সময়ে ছুটি হলে আনতে আসব। সাড়ে ১২টা নাগাদ দেখলাম অনেকে ফিরে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি স্কুলে এসে দেখি শিক্ষক নেই।” নরেনবাবু বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে রাস্তার দিকে চলে যেতে না পারে সেই কারণে আমি নজর রেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকেরা না-আসায় অভিভাবকদের খবর দিই। শিক্ষা দফতর-সহ সর্বত্র বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাব।”
প্রধান শিক্ষক দেবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার ৫৭ বছর বয়স। প্রায় ৪০ কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসতে হয়। এ দিন প্রচণ্ড গরমে আমি সাইকেলে করে স্কুলে আসার সময়ে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ি। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। কিছুটা সুস্থ হবার পরে বিশ্রাম নিতে বাড়ি আসি।” সহকারী শিক্ষক বিদ্যুৎ দলুই বলেন, “চার দিন আগেই আমি এ দিনের জন্য ছুটি নিয়েছি। বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। সে কথা প্রধানশিক্ষক জানেন। তা সত্ত্বেও উনি নিজেই স্কুলে এলেন না।” অন্য সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।” জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের সভাপতি বলেন, “অন্তত একজন শিক্ষক তো আসতে পারতেন। কারও না-আসাটা গর্হিত অপরাধ হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.