বিভাজন চান না সূর্য
ইচ্ছুকদের দায় সরকার কেন নেবে, প্রশ্ন মন্ত্রীর
সিঙ্গুরে ‘ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক বিভাজন’ বিতর্ক ক্রমশ অন্য মাত্রা পাচ্ছে। ‘ইচ্ছুক’ জমিদাতাদের ‘দায়’ নিতে রাজ্য সরকার যে ‘আগ্রহী’ নয়, রবিবার সেই ইঙ্গিত দিলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এ দিন সিঙ্গুরে তিনি বলেন, “যাঁরা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা এখন সরকারি সাহায্য দাবি করতে পারেন না।”
সিঙ্গুরে ‘ইচ্ছুক’ জমিদাতার সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। ‘অনিচ্ছুক’ চাষি, বর্গাদার ও খেতমজুর ৩,৭৪৬ জন। শনিবার থেকে ব্লক অফিসে ‘অনিচ্ছুক’দের সরকারি সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে শুনে একাধিক ‘ইচ্ছুক’ জমিদাতার প্রশ্ন ছিল, “সরকার কেন ইচ্ছুক-অনিচ্ছুকদের আলাদা চোখে দেখবে।” টাটাদের প্রকল্পে জমি দিয়ে যাঁরা সেখানে চাকরির আশা করেছিলেন, তাঁদের কী হবে, উঠেছিল সে প্রশ্নও। ‘ইচ্ছুক’দের বক্তব্য, তাঁরা যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তা প্রায় শেষ। চাকরিও মেলেনি, বা চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কেন তাদের পাশে দাঁড়াবে না? ‘অনিচ্ছুক’দের সাহায্য দেওয়ার কাজ দেখতে এ দিন সিঙ্গুর ব্লক অফিসে গিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “চাকরির প্রতিশ্রুতি কেউ ওঁদের দিয়েছিল নাকি? দিয়ে থাকলেও আগের সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায় এই সরকার নেবে কেন?”
সিঙ্গুরে বিডিও অফিসে কৃষিমন্ত্রী। -নিজস্ব চিত্র
যদিও বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “সরকার ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক ভাগ করতে পারে না। শুধু তাই নয়, এই ভেদাভেদ অসাংবিধানিকও বটে।” তাঁর দাবি, “আমরা ভাতা বলে আলাদা কিছু বলছি না। সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হলে, সবাইকেই দিতে হবে।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও এ দিন বলেন, “সিঙ্গুরে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক বিভাজনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারি সাহায্য ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক নির্বিশেষে সকলকেই দেওয়া উচিত।” সূর্যবাবুর বক্তব্য, “যাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়েছিলেন, তাঁরা জমি দিয়েছিলেন শিল্পের জন্য। প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু লোক কাজ করছিলেন। শিল্প-প্রকল্প ঘিরে কিছু জীবিকার সৃষ্টি হয়েছিল। সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা হলে তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না কেন?’’ সিপিএমের হুগলি জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরীর মন্তব্য, “যাঁরা জমি দিয়ে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা কি ভাল অবস্থায় আছেন? সেটা কেন খতিয়ে দেখছে না সরকার?” ‘অনিচ্ছুক’দের জমি ফেরত দেওয়ার দাবির সমর্থনে সিঙ্গুরে এ দিন মিছিল করে এসইউসি সাংসদ তরুণ মণ্ডলও বলেছেন, “যাঁরা জমির টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা এখন অন্যায় কিছু বলছেন না। তাঁরাও আর্থিক ভাবে ভাল অবস্থায় নেই। এ ভাবে ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক বিভেদ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।”
বেড়াবেড়ির বিফল বাঙালের সাত বিঘে জমি গিয়েছিল টাটাদের প্রকল্প এলাকায়। জানালেন, ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন যে টাকা পেয়েছিলেন, তা-ও ‘তলানি’তে ঠেকেছে। একমাত্র ছেলে বাপ্পা প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন প্রকল্প এলাকায়। কিন্তু টাটারা চলে যাওয়ায় তাঁর চাকরিটিও গিয়েছে। বিফলবাবুর কথায়, “আমরা সরকারি সাহায্য পাব না কোন যুক্তিতে? আমরা তো আর বড়লোক নই!” গণেশ বাঙাল আড়াই বিঘে জমি বিক্রির টাকা পেয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ নিলেও তাঁরও এক ছেলে চাকরি পাননি। তাঁর আক্ষেপ, “আমরা একটা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম। এতে দোষ কোথায়? এই সরকারও তো আমাদের। তারা কি এখন আমাদের জন্য কিছুই ভাববে না?”
সিঙ্গুর ব্লক অফিসে এ দিন সাহায্য নিতে এসেছিলেন প্রায় চারশো জন। তাঁরা আবার ‘ইচ্ছুক’দের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। বেড়াবেড়ির পূর্বপাড়ার অজয় মান্নার কথায়, “অনেকে জমি দিয়ে বহু টাকা পেয়েছে। আর আমরা যারা আন্দোলন করতাম, তারা রাতের পর রাত পালিয়ে বেড়িয়েছি। এখন আমরা টাকা পেলে ওদের অসুবিধা কোথায়?”
পূর্বপাড়ার বাসিন্দা, আর এক অনিচ্ছুক চাষি সুনীল দাসের তিন বিঘা জমি অধিগৃহীত হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য, “সে সময়ে বাম সরকার কোনও ভাবে আমাদের পাশে থাকেনি। এখন তৃণমূল সরকার আমাদের সাহায্য দিচ্ছে। ভালই তো। যাঁরা জমির টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা সেই সাহায্য চাইছেন কেন?” জমি-আন্দোলন পর্বের নেতা তথা হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্নার মতে, “ইচ্ছুকরা জমির দাম পেয়েছেন। আগের সরকারের থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। অনিচ্ছুকেরা দীর্ঘ দিন ধরে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। তাইই ওঁদের ব্যাপারে সরকার ভেবেছে।” অনিচ্ছুক চাষিদের সমর্থনে এ দিন হরিপাল বিধানসভা এলাকায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.