সম্পাদকীয় ২...
শিক্ষক শিক্ষিত হউন
স্কুলে ইউনিফর্ম না-পরিয়া আসার অপরাধে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পোশাকের অংশ ক্লাস-ভর্তি পড়ুয়ার সামনে (যাহাদের মধ্যে ছেলেরাও ছিল) খুলিয়া লইয়া অপমানিত করার ঘটনা দেখাইয়া দিতেছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মন কোন অতলে পড়িয়া আছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার এক স্কুলে দরিদ্র পরিবারের ওই ছাত্রীটির ইউনিফর্মের প্যান্টটি বর্ষার জন্য শুকাইয়া তোলা যায় নাই। সে জন্য তাহাকে অন্য একটি প্যান্ট পরিয়া স্কুলে আসিতে হয়। তাহাতে যদি স্কুলের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ভঙ্গ হইয়া থাকে, সে জন্য ছাত্রীটিকে তিরস্কার করা যাইত। নিয়মের অতিরিক্ত কড়াকড়ি করিলে তাহাকে ক্লাসে বসিতে না দিয়া বাড়ি পাঠাইয়াও দেওয়া যাইত। এগুলি যে বাঞ্ছিত বা উচিত কাজ হইত, তাহা নহে, কিন্তু এই ধরনের ‘শাস্তি’ দিলে ছাত্রীটি তাহা ‘স্বাভাবিক’ গণ্য করিতে পারিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকা কিশোরী ছাত্রীটিকে সর্বসমক্ষে অসম্মান করিলেন, তাহার সম্ভ্রমহানিও ঘটাইলেন। ইহা লজ্জাকর এবং অন্যায়।
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করিয়া জল অনেক দূর গড়াইয়াছে। থানা-পুলিশ হইয়াছে, জেলাশাসক স্কুল পরিদর্শকদের তদন্ত করিয়া রিপোর্ট দিতে বলিয়াছেন। সমবেত সামাজিক চাপে পড়িয়া শিক্ষিকাও সম্ভবত অনুতপ্ত। তিনি নাকি ক্ষমা চাহিয়াছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের স্খলন আর হইবে না বলিয়া লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়াছেন। ইহা সুলক্ষণ। কিন্তু ইহাতে কি ছাত্রীটির মানসিক যন্ত্রণা, গ্লানি, শারীরিক লজ্জাবোধের কোনও উপশম হইবে? ছাত্রীটি অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছে। অপমান ও লজ্জা তাহাকে ভিতরে-ভিতরে কুঁকড়াইয়া দিয়াছে। বয়ঃসন্ধি বড় বিপজ্জনক ও স্পর্শকাতর সময়, সংবেদনশীলতার সহিত সাবধানে এই সময়ের অভিঘাত সহ্য করার শিক্ষা দিতে হয়। একঘর পড়ুয়ার সামনে আংশিক অনাবৃত হওয়ার অপমান এই বয়সের কিশোরীর পক্ষে সহজ ভাবে মানিয়া লওয়া দুঃসাধ্য। শিক্ষিকার ক্ষমাপ্রার্থনা কিংবা অনুতাপে ছাত্রীটির মনোবেদনা তাই বিন্দুমাত্র লাঘব হইবার নয়। এবং লক্ষণীয়, শিক্ষিকা, হয়তো চাকুরি বাঁচাইতেই, যে অনুশোচনা প্রদর্শন করিয়াছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাহার ধারকাছ দিয়া যান নাই। বরং স্কুলের পরিচালকমণ্ডলীর লোকজন বিষয়টিকে ‘সামান্য, মামুলি ঘটনা’ বলিয়া উড়াইয়া দিতে চাহিয়াছেন।
এ ধরনের আচরণ শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রসমাজকেই বিরূপ করিয়া তোলে। শিক্ষক-পরিচালকরা প্রায়শ ভুলিয়া যান, শৃঙ্খলার জন্য নিয়মকানুনের প্রয়োজন থাকিলেও নিয়ম মানুষের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ নিয়মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্যই নিয়ম। শৃঙ্খল বলিয়া গণ্য হইলে এ জন্যই প্রায়শ অনেক নিয়ম বদলাইয়া ফেলিতে হয়। এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রটিতে নিয়মকে কেবল যান্ত্রিক ভাবে প্রয়োগ করার মূঢ়তাই লক্ষিত হইতেছে না, তাহা প্রয়োগের সময় দণ্ডিতের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নিষ্ঠুরতা এবং অসংবেদী মনোভাবেরও পরিচয় মিলিতেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ যখন বিষয়টিকে ছোটখাটো ঘটনা বলিয়া চাপা দিতে চেষ্টা করেন, তখন তাঁহাদের তরফেও সেই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়। কর্তব্যচ্যুত চিকিৎসক সম্পর্কে প্রায়শ বলা হইয়া থাকে আগে নিজেকে নিরাময় করুন। এ ধরনের শিক্ষকদের সম্পর্কেও তেমনই বলা চলে আগে নিজেকে শিক্ষিত করুন, ছাত্রছাত্রীদের সন্তানস্নেহে প্রতিপালন করুন, তাহাদের সহিত বন্ধুর মতো, শুভার্থীর মতো আচরণ করুন, তবেই না শিক্ষক নামের যোগ্য হইবেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.