পুলিশ-সিডব্লিউসি চাপানউতোর
কিশোরীকে অত্যাচারের ঘটনার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ
র সহ্য করতে পারেনি ছোট্ট মেয়ে। দুপুরে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে চাবি নিয়ে বহুতলের ফ্ল্যাটটি থেকে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। তার পরে রাস্তার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে সোজা হরিদেবপুর থানায়। মেয়েটি ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে সেখানে অভিযোগ করেছে, কী ভাবে রোজ তাকে মারধর করেন মালকিন। রুটি করতে গিয়ে আঙুলে ছ্যাঁকা লাগলে রেগে গিয়ে সেই আঙুল মচকে দেন, ভাল করে খেতে দেন না, তিন মাস ধরে মাইনেও দেন না। ঘটনাটি গত ২৬ জুন, মঙ্গলবারের।
আপাতত মেয়েটির জায়গা হয়েছে সুকন্যা হোমে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, তার বাড়ি রাঁচির কাছে কুসাটুলি গ্রামে। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা আবার বিয়ে করায় বাড়ি ছেড়ে কাজ করতে চলে এসেছিল সে। তার পরেই এই ঘটনা। আর সেই ঘটনা নিয়েই পুলিশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে কলকাতার ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’র (সিডব্লিউসি)।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের যত তৎপর হওয়ার কথা, তা তারা হয়নি বলে অভিযোগ সিডব্লিউসি-র। কমিটির সদস্যদের বক্তব্য, ২৬ জুন হরিদেবপুর থানায় ফোন করে এ ব্যাপারে কোনও কেস হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তখন থানা বলে দেয়, “কেস হয়নি।” শুক্রবার পর্যন্ত তারা সিডব্লিউসি-কে এফআইআর-এর কাগজ পাঠায়নি। এর পরে শনি-রবি ছুটি পড়ে গিয়েছে।
কলকাতা সিডব্লিউসি কোর্ট তার নির্দেশে লিখেও দেয়, ‘থানা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তিনি যেন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেন।’ পরে কলকাতা সিডব্লিউসি-র চেয়্যারপার্সন মিনতি অধিকারী বলেন, “ঘটনার পরে তিন-চার দিন কেটে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।”
পুলিশ পাল্টা জানায়, ২৬ জুন হরিদেবপুর থানায় জেনারেল ডায়েরি করা হয়। কিন্তু ‘বোঝাবুঝির অভাবে’ সিডব্লিউসি-কে প্রথমে ‘ভুল করে’ জানানো হয় যে, কোনও কেস দায়ের হয়নি। দ্রুত ‘ভুল’ সংশোধন করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, শারীরিক পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, তার বহিরঙ্গে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। কীসের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা হবে? তা ছাড়া, ১৪ বছর বা তার ঊর্ধ্বের কোনও কিশোর-কিশোরীকে ‘শিশু-শ্রমিক’ বলা যায় না। তাই মেয়েটির বয়সের প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িতে শিশু-শ্রমিক রাখার অপরাধে গৃহকর্ত্রীকে গ্রেফতার করা যাবে না।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৭ জুন জেনারেল ডায়েরির ভিত্তিতে মামলা রুজু (কেস নম্বর ২২০) হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৩ ও ১১৪ ধারায় এবং জুভেনাইল জাস্টিস আইনের ২৩ নম্বর ধারায় মামলা হয়েছে। সিডব্লিউসি-র আইনজীবী সরফরাজ আলমের কথায়, “আইপিসি ৩৪১ এবং জেজে অ্যাক্টের ২৩ নম্বর ধারায় পুলিশ তৎক্ষণাৎ কাউকে গ্রেফতার করতেই পারে। এর জন্য বয়সের প্রমাণপত্র বা বাচ্চার গায়ে অত্যাচারের দাগ থাকতেই হবে, এমন নয়। জেজে অ্যাক্টের ২৩ নম্বর ধারায় বলাই আছে, অত্যাচার শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও হয়। এ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজে পুলিশকে অত্যাচারিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। তবু কেউ গ্রেফতার না-হলে ধরে নিতে হবে, পুলিশের কাজে ফাঁক আছে।”
জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সদস্যা বিপাশা রায়ও বলেন, “নিম্ন আদালত পুলিশকে সরাসরি গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে না। তারা ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নিতে নির্দেশ দিতে পারে। তাতেই পুলিশকে ধরে নিতে হবে, কোর্ট কড়া ব্যবস্থার কথা বলছে। সিডব্লিউসি কোর্টও সেই নির্দেশই দিয়েছিল। থানায় যে সব ধারায় এফআইআর, তার কয়েকটিতে পুলিশের গ্রেফতারের ক্ষমতাও আছে।” ডিসি সাউথ-ওয়েস্ট সুব্রত মিত্রের বক্তব্য, “পুলিশের যা করণীয় সব করেছে। গৃহকর্ত্রী ও কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.