পাম্পের বিল বকেয়া
বিদ্যুৎ-বিছিন্ন করার হুঁশিয়ারি
বোলপুর ও শান্তিনিকেতন এলাকার চাষিদের গত মরসুমের সাবমার্সিবল পাম্পের বকেয়া বিদ্যুতের বিলের পরিমাণ পৌঁছেছে প্রায় ২ কোটিতে। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, বকেয়া না মেটানো হলে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এই পরিস্থিতিতে আগামী মরসুমে আদৌ চাষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে চাষিরা। তাঁদের ক্ষোভ, গত মরসুমে চাষ করে ফসলের দাম না পেয়ে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। নতুন মরসুমে বিদ্যুৎ না মিললে চাষের কোনও কাজই করতে পারবেন না। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই চাষিরা। এ দিকে, অবিলম্বে বিল জমা দেওয়ার আর্জিতে এলাকায় মাইকিং করে প্রচারে নেমেছে বিদ্যুৎ দফতর।
বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের বোলপুর গ্রুপ সাপ্লাই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কঙ্কালীতলা, বাহিরী-পাঁচশোয়া, সর্পলেহণা-আলবাঁধা ও সিয়ান-মুলুক-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৭০০-রও বেশি সাবমার্সিবল পাম্পের সংযোগ রয়েছে। ওই সংযোগ থেকে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে ফসল উৎপাদন করেন এলাকার চাষিরা। স্টেশন ম্যানেজার আবদুল গফ্ফর বলেন, “এখানে বকেয়া ৭০ লক্ষরও বেশি টাকা। ওই বকেয়া তুলতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের পক্ষে ওই চাষিদের বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া কঠিন। আমরা তাই প্রচার করে চাষিদের কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে বিল মেটান।”
কিন্তু বকেয়া মেটাতে সমস্যা কোথায়?
রূপপুর গ্রামপঞ্চায়েতের বিনুরিয়া গ্রামের প্রান্তিক চাষি জগন্নাথ দাস-এর ক্ষোভ, “সংসার চালানোর সামর্থ নেই, বিল মেটাবো কোথা থেকে?” একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন নিগমের শান্তিনিকেতন গ্রুপ সাপ্লাই এলাকার বকেয়া বিল না মেটানো চাষিরাও। পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের খিরুলি গ্রামের চাষি শফিয়া বিবি বলেন, “এক দিকে চাষের খরচ বাড়ছে, কিন্তু আমরা ফসলের তেমন দাম পাচ্ছি না। গত মরসুমে চাষে ক্ষতির জন্যই আমাদের পক্ষে বিদ্যুতের বিল মেটানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
আসন্ন মরসুমের অনিশ্চয়তায় ওই চাষিরা তাকিয়ে আছেন রাজ্য সরকারের দিকে। তাঁদের আশা, হতদরিদ্র অবস্থার কথা জেনে সরকার নিশ্চয় তাঁদের সাহায্যে কিছু একটা ব্যবস্থা করবে। শান্তিনিকেতন গ্রুপ সাপ্লাই সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার কসবা, সাত্তোর, রূপপুর-সহ একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় সাড়ে চারশোটি সাবমার্সিবল পাম্পের সংযোগ রয়েছে। স্টেশন ম্যানেজার মহম্মদ সোহেল হাসান বলেন, “বকেয়ার পরিমাণ ১ কোটি ছাড়িয়েছে। ওই বকেয়া তোলার জন্য শনিবার থেকে একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় আমরা প্রচর অভিযান শুরু করেছি।”
বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের এই প্রচারে অবশ্য বেশির ভাগ চাষিরই কপালে ভাঁজ পড়েছে। আর্জির সুরে হলেও বকেয়া না পেলে পরের মরসুমে যে আর বিদ্যুৎ সংযোগ মিলবে না, সেটা বুঝতে পারছেন তাঁরাও। এমনিতেই এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির তেমন দেখা মেলেনি। এলাকার চাষিরা মনে করছেন এ বার চাষের জন্য যথেষ্ট জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে তাঁদের তখন সাবমার্সিবল পাম্পের জলের উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ওই জলও যে পাওয়া যাবে সেই নিশ্চয়তায় পৌঁছতে পারছেন না ওই চাষিরা।
এলাকার কৃষক সংগঠন কৃষিজীবী সঙ্ঘের সভাপতি প্রবীর রায় বলেন, “চাষিরা সবদিক থেকে আক্রান্ত। একদিকে ফসল উৎপাদনের হার কমছে, কিন্তু অন্য দিকে সারের দাম বাড়ছে। ফসলে পোকা লাগায় এবং প্রচণ্ড দাবদাহে বোরো চাষে ক্ষতির মুখ দেখেছেন চাষিরা।” তাঁর আশঙ্কা, “আমন চাষের আগে বিদ্যুৎ নিগমের এই হুঁশিয়ারিতে মারা পড়বেন চাষিরাই।”
সংগঠনের সম্পাদক তথা প্রান্তিক চাষি জাহাঙ্গির মণ্ডলের দাবি, “বিদ্যুৎমন্ত্রী তো বলছেন রাজ্যে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত। তাহলে চাষিদের বিদ্যুৎ শুল্ক কমিয়ে দিক সরকার।” দক্ষিণের বেশ কয়েকটি রাজ্যে চাষের কাজে বিদ্যুতের মূল্য ৫০ পয়সা প্রতি ইউনিট। ওই চাষিরা তাই অন্যান্য রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
এই অসহায় অবস্থায় চাষিরা কিন্তু তাকিয়ে আছেন সরকারের দিকেই। ফলে বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের ওই কোটি টাকার বকেয়া আদৌ মিলবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয়ও তৈরি হয়েছে। তবে নিগমের আধিকারিকেরা এখন এত কিছু ভাবতে চান না। আপাতত এলাকায় গিয়ে বকেয়া মেটানোর আর্জিতে প্রচার চালানোর উপরই জোর দিচ্ছেন তাঁরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.