নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
মহাজনদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ১৯৬৯ সালে মাত্র ৬১০ টাকা মূলধন নিয়ে ডিএসপি-তে যে ক্রেডিট সোসাইটি গড়ে তোলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তা-ই পুরোদস্তুর ব্যাঙ্ক হয়ে ওঠে। দুর্গাপুর শহরে এখন তাদের ৫টি শাখা, ৬টি এটিএম কাউন্টার।
এ বার সেই ব্যাঙ্কের ‘দখল’ নিয়েই অশান্ত হল ইস্পাতনগরী। দিনের শেষে পরিচালন পর্ষদের রাশ চলে গেল সিটুর হাত থেকে।
ডিএসপি সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে বহু কর্মীই যে বেতন পেতেন তাতে তাঁদের অনেকেরই সংসারে টানাটানি চলত। মাসের শেষ দিকে অনেকেই হাত পাততেন সুদখোর মহাজনদের কাছে। আর এক বার মহাজনদের খপ্পরে পড়লে উদ্ধার পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য। কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে সিআইএসএফ বহাল হয়নি তখনও। বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের বাধা অগ্রাহ্য করে মহাজনেরা ঢুকে পড়ত কারখানার ভিতরেও। তাদের রমরমা রুখতে কিছু একটা করার ভাবনা নিয়ে একজোট হন কিছু শ্রমিক নেতা ও কারখানার আধিকারিকেরা। সেই উদ্যোগেরই ফসল এখনকার এই ব্যাঙ্ক।
ক্রেডিট সোসাইটি গড়ে তোলার সেই সব দিনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল অজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো সিটু নেতাদের। সিটু-র দাবি, এত দিন যে কোনও শ্রমিক সংগঠন নির্বিশেষে কর্মীরা তাদের উপরে আস্থা রাখাতেই তারা সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের ভোটে টানা জিতে এসেছে। |
গণ্ডগোলের পরে ঘটনাস্থলে দু’পক্ষের নেতারা। —নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্যে বর্তমানে মোট ৪২টি ‘আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক’ আছে। আর্থিক লেনদেন, স্বচ্ছতা, ব্যবসাবৃদ্ধি প্রভৃতি সূচকের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই ব্যাঙ্ক শেষ কয়েক বছর টানা প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে।
এ দিন অশান্তির খবর পেয়ে শহরের নতুন মেয়র তথা তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায় দুর্গাপুর ইস্পাত বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্রে যান। ঘটনাস্থলে যান আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র রথীন রায়েরাও। সিটুর সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ দত্তের অভিযোগ, “পুরভোটের আগেই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের পরিচালন পর্ষদ গঠনের নির্বাচন ভেস্তে দিয়েছিল আইএনটিটিইউসি। কারণ সেখানে আমরাই জিততাম। পুরভোটে তার প্রভাব পড়ত। পরে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়ে পুর নির্বাচনে জেতে তৃণমূল। ব্যাঙ্কের ভোটেও সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করল ওরা।” সিটুর যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ রায়ও একই অভিযোগ তোলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যসভার সাংসদ তথা সিটু-র সর্বভারতীয় সভাপতি তপন সেন অভিযোগ করেন, “রাজ্যে একের পর এক ঘটনায় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুন্ঠিত হচ্ছে।” তৃণমূল অবশ্য সেই পুরভোটের সময় থেকেই অভিযোগ করে আসছে, গত ৩৪ বছর ধরে কোনও ভোটে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি মানুষকে। সে কারণেই সিটু তথা সিপিএম একচেটিয়া জিতত। আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “এ বারও ওরা তাই করতে গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। সে কারণেই সিটু ও সিপিআইএম নেতারা উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করেছেন।” নির্বাচনের ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’ ধীরাজ ঘোষ বলেন, “আমি সরকারি কর্মী। এ নিয়ে কিছু বলার অধিকার নেই।” |