গ্রামে ঢোকা ও বেরনোর রাস্তা একটাই। কিন্তু সেখান যাতায়াত করতে ভয় পান বাসিন্দারা। রাস্তার তিন দিক থেকেই মাটি ফুঁড়ে বেরোচ্ছে ধোঁয়া, আগুন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তবু সেই পথ ধরেই যাতায়াত করতে হয় আট থেকে আশি, সবাইকে।
বারাবনির সালানপুরে সামডিহি পঞ্চায়েতের বিনোদকাটা গ্রামের ছবি। শুধু গ্রামবাসীরা নন, এই সমস্যায় ব্যতিব্যস্ত প্রশাসনের কর্তারাও। ধস, ধোঁয়া, আগুনের গ্রাস থেকে এলাকাকে বাঁচানোর জন্য পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব এডিডিএ-র। সংস্থার চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপধ্যায় জানান, এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার পাশাপাশি আগুন ও ধোঁয়া মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাকুল্যে ৭০টি আদিবাসী পরিবারের শ’চারেক মানুষের বাস এই গ্রামে। এলাকায় ঢুকতেই নাকে আসে ঝাঁঝাঁলো গন্ধ। চার দিকে ধোঁয়া। মাটি থেকে বেরোচ্ছে তাপ। মাঝে মাঝে আগুনের ফুলকিও চোখে পড়ছে। কুলবেড়িয়া, বোলকুণ্ডা-সহ আরও কয়েকটি গ্রাম আছে আশপাশে। কিন্তু এই গ্রামের মতো সমস্যা সেগুলির কোনওটিতেই নেই। ইসিএলের এক খনি বিশেষজ্ঞের মতে, গ্রামের আশপাশে সংগ্রামনগর, পাহাড়গড়া, সামডিহি, কুলুকানালি-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে যথেচ্ছ অবৈধ কয়লা খাদান চলছে। সেই খনিমুখ দিয়ে হাওয়া ঢুকে যাচ্ছে মাটির তলার কয়লা স্তরে। মাটির তলায় মজুত মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে আসছে হাওয়া। তাতেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আগুন লেগে যাছে। সেই আগুনে পুড়ছে ভূগর্ভস্থ কয়লা। |
কয়লা পোড়ার আগুন ও ধোঁয়া মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তারা মুখি বলেন, “রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বুঝতে পারি, মাটি ফুঁড়ে তাপ বেরোচ্ছে। ধোঁয়ার গন্ধে চোখ-মুখ জ্বালা করে।” আর এক বাসিন্দা ঈশ্বর সহিস বলেন, “রাস্তা এত খারাপ যে গাড়ি ঢুকতে পারে না। কেউ অসুস্থ হলে দড়ির খাটিয়ায় শুইয়ে গ্রামের বাইরে নিয়ে যেতে হয়।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সমস্যার কথা বহু বার প্রশাসনকে জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও সুরাহ হয়নি। গত ১৮ জুন এই গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা এই সমস্যার সমাধান ও রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সালানপুর ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও জয়দীপ দাস না থাকায় যুগ্ম বিডিও-কে বেশ কিছুক্ষণ ঘেরাও করেন তাঁরা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘেরাওমুক্ত হন তিনি। কিন্তু দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
স্থানীয় বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় বলেন, “আমি ওই এলাকা ঘুরে দেখেছি। রাস্তাটি যে কোনওদিন তলিয়ে যেতে পারে। খুদে পড়ুয়াদের ওই রাস্তা ধরে স্কুলে যেতে আসা-যাওয়া করতে হয়। আমি এডিডিএ-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। শীঘ্রই ব্যবস্থা হবে।” এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপসবাবু জানান, শুধু বিনোদকাটা গ্রাম নয়, আসানসোল, রানিগঞ্জে আরও অনেক জায়গায় এই সমস্যা আছে। তিনি বলেন, “আমি মহকুমা ও ব্লক প্রশাসন, ইসিএল এবং ডিজিএমএস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। পুনর্বাসনের পাশাপাশি ধোঁয়া ও আগুন থেকেও বাসিন্দাদের মুক্ত করা হবে।” এ ব্যাপারে একটি খসড়া প্রকল্পও তৈরি হয়েছে বলে জানান তাপসবাবু। সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান আসানসোলের মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মাও। |