নিজস্ব সংবাদদাতা • জামুড়িয়া |
আরও বেশি যন্ত্রপাতি ও কর্মী নিয়োগ করে জামুড়িয়ার বেলবাঁধ প্যাচে দ্রুত আগুন নেভানোর সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন ও ইসিএল। আগুন নেভাতে পরবর্তী পদক্ষেপ ও জনপদের সুরক্ষার ব্যাপারে শনিবার জামুড়িয়া ব্লক অফিসে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক জয়ন্তকুমার আয়কত, মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মা, সেন্ট্রাল মাইনিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি ও ইসিএলের পদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। মহকুমাশাসক জানান, সেখানেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেআইনি ইটভাটা চিহ্নিত করতে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত মঙ্গলবার বিকেলে বেলবাঁধ প্যাচ সংলগ্ন একটি অবৈধ খাদানে আগুন লাগে। তা থেকে ইসিএলের খনিতে আগুন ছড়ালেও তা নিভিয়ে ফেলা হয়। তবে ওই অবৈধ খাদান ও পাশের একটি ইটভাটায় আগুন আয়ত্তে আসেনি। ইটভাটার কাছে মাটি ধসে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন ইসিএলের এক নিরাপত্তাকর্মী। |
শনিবার থেকে আগুন লাগা এলাকায় ছাই ভরাটের কাজ শুরু করেছে ইসিএল। শনিবার বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে মহকুমাশাসককে ঘেরাও করে বাসিন্দারা অভিযোগ জানান, ইসিএল বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে না। নিখোঁজ নিরাপত্তাকর্মী সুভাষ গোরের হদিস পাওয়ার ব্যাপারেও তারা উদাসীন বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। মহকুমাশাসক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘেরাওমুক্ত হন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা অলোক মণ্ডলের দাবি, “ছাই ভরাট ছাড়া ইসিএল কোনও কাজ করছে না। ফলে আগুন নিভতে এখনও অনেক সময় লাগবে। এর জেরে জমির ক্ষতি হতে পারে।”
এ দিকে, অবৈধ খনন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, পুলিশ-প্রশাসনের এমন দাবি যে মিথ্যা তা জামুড়িয়ার বেলবাঁধ প্যাচে আগুন লাগার ঘটনাতেই প্রমাণ হয়েছে অভিযোগ তুলেছেন আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তাঁর দাবি, কয়লা কাটার পরে কিছু দিন ফেলে রাখলে তা অক্সিজেনের স্পর্শে এসে আগুন ধরে যায়। দীর্ঘ দিন কয়লা কাটা বন্ধ থাকলে ওই খনিতে জল জমে যেত। সে ক্ষেত্রে সেখানে আগুন লাগত না। তাই এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার, ওই অবৈধ খনিতে কিছু দিনের মধ্যেই কয়লা কাটা হয়েছে। সাংসদ জানান, এই এলাকায় যে রমরমিয়ে অবৈধ খনন চলছে, তা তিনি ইসিএলের সিএমডি-কে জানিয়েছেন। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীকেও এ ব্যাপারে তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। বংশবাবু আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ এবং ইসিএলের একাংশের মদতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই অবৈধ খনন চালাচ্ছেন। |
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই এলাকায় বেশ কিছু ইটভাটা চলে। অবৈধ খননকারীদের থেকে কয়লা তারাই কেনে বলে অভিযোগ। কিছু দিন আগেই ওই এলাকায় ইসিএলের খনির ম্যানেজার অবৈধ খননকারীদের মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তার পরে ওই ম্যানেজারকে সাসপেন্ড করে ইসিএল।
তাদের মদতে অবৈধ খনন চলছে, এমন অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। দলের প্রদেশ কমিটির সদস্য মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “এই এলাকার সিপিএম নেতাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অবৈধ কয়লা কারবারের অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের নির্দেশেই এখনও এই কাজ হচ্ছে। জনরোষ থেকে বাঁচতে এখন এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে ওরা।” আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “অবৈধ খননের অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযান চালাই। পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ মিথ্যা।” ইসিএলের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগও মানতে চাননি সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়।
|