ভরদুপুরে অফিসের ভিতরে পিকনিকে মাতলেন সরকারি দফতরের কর্মীরা। উপলক্ষ, রাজস্ব আদায়ে ‘সাফল্য’।
শুক্রবার দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের (বিএলএলআরও) কর্মীদের এমন কাজে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এই ঘটনা ‘নিন্দনীয়’ জানিয়ে বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনার আশ্বাস, “খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুর্গাপুর সিটি সেন্টার এলাকায় অফিস এই দফতরের। ঢোকার মুখেই বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো, ‘কাজের সময় প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টে।’ এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ অফিসে গিয়ে দেখা গেল, তরকারি, মাংস, চাটনির গন্ধে চারপাশ ম ম করছে। ভিতরে চেয়ার, টেবিল সরিয়ে খানিকটা জায়গা বের করে এক পাশে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। পাশেই রয়েছে ঝুলে ভরা পুরনো বিদ্যুতের লাইন থেকে হিটার জ্বালানোর ব্যবস্থা। গ্যাসের উনুনে তখন ভাত রান্না হচ্ছে। অন্য সব রান্না শেষ। জানা গেল, দুপুর ১টা নাগাদ শুরু হয়েছে রান্নাবান্না। |
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা টেবিলে বসেছিলেন কর্মীরা। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নির্মল চক্রবর্তী দাবি করেন, কাজ বন্ধ রেখে পিকনিক হচ্ছে না। তাঁর কথায়, “গত আর্থিক বছরে প্রায় ২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে, যা আগের থেকে অনেক বেশি। এর পরেই কর্মীরা ধরেন, খাওয়াতে হবে। তাই এই আয়োজন। অফিসের কাজ চলছে। পাশাপাশি রান্নাবান্নাও।” এ কথা বলার পরেই তিনি ‘কাজ আছে’ বলে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান। পিকনিক কি সরকারি টাকাতেই হচ্ছে? কর্মীদের দাবি, তাঁরা চাঁদা তুলে এই সব আয়োজন করেছেন।
অফিসের ভিতরে বেঞ্চে বসেছিলেন নানা কাজে আসা কয়েক জন। মলয় নন্দী নামে এমনই এক জন বলেন, “কাজ যে একেবারে হচ্ছে না, তা নয়। তবে কর্মীরা বেশ পিকনিকের মেজাজে রয়েছেন। তাই খানিকটা ঢিলেঢালা ভাব তো আছেই।” দুর্গাপুর পুরসভার নতুন বোর্ডের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ দিন শহরে এসেছিলেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। অনুষ্ঠান শেষে তিনি মহকুমাশাসকের অফিসে যান। কাজের সময়ে পিকনিকের খবর শুনে বিএলএলআরও দফতরের এক কর্মীকে ডেকে পাঠান তিনি। তাঁর কাছে ঘটনা সবিস্তার শোনেন। পরে জেলাশাসক জানান, টিফিনের সময়ে অফিসে কর্মীরা খেতে পারেন। কিন্তু এ ভাবে রান্নাবান্না করা যায় না। তিনি বলেন, “কাজে সাফল্যের আনন্দে পিকনিক করার ইচ্ছে হতেই পারে। কিন্তু তা অফিস ছুটির পরে বা কোনও ছুটির দিনে করা যেতে পারে। কাজের সময়ে এ ভাবে পিকনিক করা ঠিক নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|