শপথ নিলেন দুর্গাপুরের নব নির্বাচিত কাউন্সিলরেরা। শুক্রবার শহরের সিধো-কানহু স্টেডিয়ামে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। মেয়র হিসেবে অপূর্ব মুখোপাধ্যায় এবং চেয়ারম্যান হিসেবে সুপ্রভাত মণ্ডল আলাদা ভাবে শপথ নেন। তবে এ দিন মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা হয়নি। শীঘ্রই তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তৃণমূলের জেলা পরিদর্শক অলোক দাস।
গত ৩ জুন রাজ্যের আরও পাঁচটি পুরসভার মতো দুর্গাপুরেও ভোটগ্রহণ হয়। ফল বেরোয় ৫ জুন। দেড় দশক ধরে বামেদের দখলে থাকা পুরসভা দখল করে তৃণমূল। ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ২৯টি, বামেরা ১১টি এবং কংগ্রেস, বিজেপি ও নির্দল একটি করে আসনে জয়ী হয়। শুক্রবার সব কাউন্সিলরই শপথ নেন। বামফ্রন্টের তরফে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য রথীন রায়, ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতান, আরএসপি-র তুষার ভট্টাচার্য, সিটুর জেলা সভাপতি দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। কংগ্রেসের অবশ্য কাউকে দেখা যায়নি। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায় জানান, দলের তরফে একটি নিমন্ত্রণপত্র তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কেউ তাঁকে বা দলের অন্য কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে তিনি বলেন, “নতুন বোর্ড ভাল ভাবে কাজ করুক। যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে আমাদের দল সব রকম সহযোগিতা করবে।”
|
কংগ্রেস নেতারা না এলেও বামফ্রন্ট নেতারা অনুষ্ঠানে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন। এ দিন একই সঙ্গে স্টেডিয়ামে ঢোকেন রথীনবাবু, শেখ সুলতান ও অপূর্ববাবু। মেয়র হিসেবে তৃণমূলের অপূর্ববাবুর নাম ঘোষণা হতেই মঞ্চে উঠে তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান রথীনবাবু। পরে তিনি বলেন, “এটাই দুর্গাপুরের সংস্কৃতি। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সাম্প্রতিক দু’একটি ঘটনা বাদ দিলে বরাবর বিরোধীদের সঙ্গে রাজনৈতিক সৌজন্যতা বজায় ছিল।”
শপথগ্রহণ উপলক্ষে স্টেডিয়ামের আশপাশে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা ছিল সকাল থেকেই। ছিলেন তৃণমূলের স্বেচ্ছাসেবীরাও। অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগে থেকেই দলে দলে তৃণমূল নেতা, কর্মী, সমর্থকেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। প্রবল গরমে উপযুক্ত হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই কাহিল হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠান শেষে এক তৃণমূলকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে সিটি সেন্টারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূলের তরফে স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে সবুজ রসগোল্লা বিলির ব্যবস্থা ছিল। ছিল ঢাক, তাসার আয়োজন। শপথগ্রহণ শেষে নতুন মেয়র অপূর্ববাবু তৃণমূল কাউন্সিলরদের নিয়ে পুরসভায় যান। তার আগে স্টেডিয়াম থেকে পুরসভা পর্যন্ত রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় সবুজ আবির। পুরসভা চত্বরে বিছানো হয়েছিল সবুজ রঙের কার্পেট। মেয়র অপূর্ববাবু জানান, নতুন বোর্ড গঠন হওয়ার পরে শহরের দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ করাকেই তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি বলেন, “সমস্যা অনেক আছে। দূষণ তারই একটা, যা সবাইকে ভোগাচ্ছে।” |
শপথগ্রহণের সময়ে সব থেকে বেশি হাততালি অবশ্য যে দুই কাউন্সিলর কুড়োন, তাঁরা হলেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দ নন্দী এবং ৪২ নম্বরের বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। অরবিন্দবাবু জিতেছেন নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে। আর বিশ্বনাথবাবু তিন বারের কাউন্সিলর হয়েও এ বার প্রথমে টিকিট পাননি। পরে দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন দাখিল করেন। নিজের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় ৪২ নম্বরে দাঁড়িয়েও জেতেন তিনি। এ দিন দু’জনেরই বক্তব্য, মানুষ চেয়েছিলেন বলেই তাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন। তবে পুরভোটের ফল বেরোনোর প্রায় ২৫ দিন পরে কাউন্সিলরেরা শপথ নিলেও মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণা না হওয়ায় হতাশ হন তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার অবশ্য দাবি, “এ দিন অনেক কাউন্সিলরের অনুগামীরাই হাজির ছিলেন। মেয়র পারিষদের তালিকায় প্রিয় নেতার নাম না থাকলে তাঁরা অশান্তি পাকাতে পারেন, এই আশঙ্কায় বিষয়টি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
|