দু’টি প্রকল্পেরই কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না মেলায় ওই প্রকল্প দু’টির সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না কাটোয়া শহরের বাসিন্দারা। প্রকল্প দু’টি থেকে তারা কবে বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুর-কর্তৃপক্ষও। ঠিক কবে থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজই বা শুরু হবে তা ঠিক ভাবে বলতে পারছেন না বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের কর্তারাও। ফলে আপাতত ওই প্রকল্প দু’টির ভবিষ্যৎ কী সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসীর একাংশ।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দু’টি প্রকল্পের একটি জলপ্রকল্প, অন্যটি কাটোয়া শ্মশান ঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লি। প্রকল্প দু’টি নিয়ে অনেক আশা রয়েছে কাটোয়ার মানুষজনের। সে কথা মাথায় রেখে কাটোয়া পুরসভা ওই প্রকল্প দু’টি হাতে নিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের অন্তর্গত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শহর পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্গত এই জলপ্রকল্প তৈরি হচ্ছে ২০৩৮ সালে আনুমানিক জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে। ওই প্রকল্পের সাহায্যে ভাগীরথীর জল পরিশোধন করে শহরের ১৯টি ওয়ার্ডেই জল সরবরাহ করা হবে। অন্য দিকে, বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) টাকায় তৈরি হওয়া কাটোয়া শ্মশানঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লিটিও। |
ওই জলপ্রকল্পে শহরের সুবোধস্মৃতি রোডে জলশোধন করে তা তিনটি ভূগর্ভস্থ জলাধারে পাঠানো হবে। সেখান থেকে একটি উঁচু জলাধারে (ওভার ট্যাঙ্ক)। তারপর ওই জল সরবরাহ করা হবে শহরবাসীকে। প্রতিটি জলাধারে গড়ে ৭ লক্ষ লিটার জল ধরবে বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে জলাধারগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভাগীরথী থেকে জল উত্তোলন করে শোধন করার কাজও শেষ। নতুন করে প্রায় ৪০ কিমি পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু কাটোয়া পুরসভা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমকে ৯৮ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা দিলেও আজও বিদ্যুতের সংযোগ মেলেনি। কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরসভার কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিন মাস হয়ে গেল টাকা জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত জলসরবরাহ প্রকল্পটি চালু হয়ে যাবে।”
এ দিকে জলপ্রকল্পের কাজে বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়ার অভিযোগও উঠেছে। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পাইপ বসানোর কাজ করতে গিয়ে এমনিতেই সুবোধস্মৃতি রোড, ঘোষ হাট, শ্মশান হাটের রাস্তার দফারফা হয়ে গিয়েছে। তার উপর কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই ওই রাস্তা হাঁটাচলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। পুরো রাস্তা খানা-খন্দ ও কর্দমাক্ত হয়ে পড়ায় যান চলাচলেও অসুবিধা হচ্ছে। কাটোয়া পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলসরবরাহ প্রকল্প সম্পূর্ণ হওয়ার আগে ওই রাস্তা নতুন করে তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে যান চলাচল যাতে স্বাভাবিক হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। |
বিদ্যুৎ সংযোগ না মেলায় জলপ্রকল্পের মতোই চালু করা যায়নি কাটোয়া শ্মশানঘাটের বৈদ্যুতিক চুল্লিও। কাজটি করছে রাজ্য পুরসভা সমূহের বাস্তুকার অধিকর্তা (এমইডি) দফতরের বর্ধমান বিভাগ। এমইডি (বর্ধমান বিভাগ) সূত্রে জানানো হয়েছে, নব্বই শতাংশ কাজই শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে দূষণ রোধের সামান্য কাজ, ভবন রং করা এবং সৌন্দর্য্যায়নের মতো কিছু কাজ বাকি। এমইডি-র এক আধিকারিক বলেন, “বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে গেলে এত দিনে আমরা চুল্লি পুরসভার হাতে হস্তান্তর করে দিতে পারতাম। পুরসভাও বৈদ্যুতিক চুল্লি চালু করে দিত।” দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু এখনও পুরো টাকা না মেলায় ক্ষুব্ধ ওই আধিকারিকের মন্তব্য, “সরকারের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬৩ লক্ষ টাকা মিললেও ঠিকাদারেরা কিন্তু তাঁদের কাজ সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন।”
প্রকল্প দু’টিতে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলছে নাই বা কেন?
বিদ্যুৎ নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ হয়ে গেলেও এক মাস আগে কিছু জিনিস কেনার জন্য নিগমের জোনাল অফিসের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। এখনও সেই অনুমোদন না মেলায় বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। সংস্থার কাটোয়া সহকারি ইঞ্জিনিয়ার (টেকনিক্যাল) বিভূতিকুমার পাল-এর অবশ্য দাবি, “যেদিন অনুমোদন মিলবে, তার পরের দিন থেকে কাজ শুরু হয়ে যাবে। ৩৩/১১ কেভিএ পাওয়ার স্টেশন থেকে মোট ৮১টি বিদ্যুতের খুঁটি বসবে। ১১ কেভিএ লাইন যাবে। দু’টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসবে। আশা করি, ১-২ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”
কিন্তু ওই অনুমোদনই বা মিলবে কবে? তার অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
|