মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে রাজেশের বৈবাহিক অতীত জানতে পারলে হয়তো ঠকতে হত না পিকনিক গার্ডেনের
গিরি পরিবারকে। চিৎপুরের বিবাহ বিভ্রাটের পরে এ নিয়ে আফশোসের শেষ নেই এই পরিবারের। শুধু মাত্র গিরিরাই
নয়, পাত্র-পাত্রীর সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য না জানতে পারায় ভুগতে হয় বহু পরিবারকেই।
অবশ্য জানতে চাইলেই যে তথ্য মিলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বর-কনের অতীত-বিবাহ রয়েছে কি না, এ রাজ্যে সেই তথ্য জানার কার্যত কোনও উপায়ই এখন নেই। তাই পূজা কৌরকে বিয়ে করার কথা লুকিয়ে রাজেশ ফের বিয়ে করতে যেতে পারেন স্বভূমি-তে।
রাজ্যের ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর সূত্রে খবর, পাত্রপাত্রীর নাম, বিয়ের তারিখ এবং কোন ম্যারেজ অফিসার বিয়ে দিয়েছেন এ সব জানাতে পারলে তবেই কিছু তথ্য মিলতে পারে। কিন্তু যাঁরা হবু বর বা কনে সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে চাইবেন, তাঁরা এ সব তথ্য আগাম জানবেন কী ভাবে? তা ছাড়া, প্রয়োজনীয় সুলুকসন্ধান দিতে পারলেও যে সরকারি অফিস থেকে উপযুক্ত তথ্য মিলবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আর যদিও বা তথ্য মেলে, তার জন্যও অন্তত দশ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
তবে পরিস্থিতিটা অনেক ক্ষেত্রেই আরও ঘোরালো। কারও যদি নিজের বিয়ের শংসাপত্র হারিয়ে গিয়ে থাকে এবং বিদেশযাত্রা, রেশন কার্ড, পাসপোর্ট করার জন্য নিজের বিয়ের শংসাপত্রের ‘সার্টিফায়েড কপি’-র প্রয়োজন হয়, তা হলে তাঁকে প্রায় দু’মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কারণ, পঞ্চায়েত ভবনের তিন তলায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের অফিসে এখন শুধুই ফাইলের পাহাড়। তার মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট ফাইল খুঁজে পেতেই লেগে যাবে সাত-দশ দিন। এর পরে শংসাপত্র তৈরি করতে প্রয়োজন টাইপিস্টের। কিন্তু এখন ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে কোনও টাইপিস্ট নেই। ভাড়া করা টাইপিস্ট এনে শংসাপত্র তৈরি করতেও সময় লাগছে।
অথচ, বহু বছর আগেই এই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে বিয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রি-ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনফরমেটিক সেন্টার বা এনআইসি-কে এই ব্যবস্থা চালু করার দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। ওয়েবসাইট তৈরিতে খরচ হবে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা। এই কাজ শুরু করতে গত বছর প্রাথমিক ভাবে ৭০ লক্ষ টাকা দিয়েছে এনআইসি-কে দিয়েছে সরকার।
এনআইসি সূত্রে খবর, নয়া এই প্রকল্পের দু’টি পর্যায় রয়েছে। একটি পর্যায়ে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু করা। অন্য পর্যায়ে ১৮৩৭ সাল থেকে যত বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, তা-ও অনলাইন তথ্যভাণ্ডারে নথিভুক্ত করা। বর্তমানে এই ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে বলে এনআইসি সূত্রে খবর। কিন্তু কবে ‘অনলাইন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন’ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউই। এনআইসি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি শুরু করা যাবে।
ওই সংস্থা সূত্রেই খবর, নতুন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় বর-কনের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য ছাড়াও থাকবে ছবি, আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষর এবং মোবাইল নম্বরও। কারও বিয়ে হয়েছে কি না জানতে তাঁর নামের সঙ্গে জন্মতারিখ বা ঠিকানার পিনকোড দিয়ে অনুসন্ধান দিলেই তথ্য মিলবে। পরবর্তী সময়ে ‘আধার কার্ড’ শুরু হলে, তার মাধ্যমেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এনআইসি-র এক কর্তার কথায়, “বিয়ের অনেক তথ্যই বর-কনের একান্ত ব্যক্তিগত। সেই তথ্য যাতে সবাই জানতে না পারেন, সে ব্যবস্থাও থাকবে ওয়েবসাইটে।” শুধু বিয়ের খবরই নয়, ওই ওয়েবসাইট চালু হলে বিদেশযাত্রা, রেশনকার্ড, পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনেও বিয়ের শংসাপত্র মিলবে দ্রুত। |