বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে জোগানের তাল মেলাতে যখন বেশির ভাগ রাজ্য হিমশিম খাচ্ছে, তখন এ রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত বিধানসভায় জানালেন, এখানে আগামী দিনে যদি বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েও, তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের রয়েছে।
সরকারের এই দাবি কিন্তু মানতে নারাজ বিরোধীরা এবং শিল্পমহলের একাংশ। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা যে হয়েছে, সে কথা মেনে নিয়েও বিদ্যুৎ শিল্পমহলের একটা অংশ বলছে, শিল্পায়ন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার ফলেই চাহিদার তুলনায় জোগান বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। শিল্পায়ন প্রক্রিয়া থমকে
|
মণীশ গুপ্ত |
যাওয়ার কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও।
শনিবার বিধানসভায় বিদ্যুৎ বাজেট নিয়ে বক্তৃতায় মণীশবাবু জানান, রাজ্যে এখন বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। আগামী মাসগুলিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও তা সামাল দিতে সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, “দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে (২০১২-’১৭) রাজ্যে অতিরিক্ত যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, তাতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও অনায়াসে তা মোকাবিলা করা যাবে।”
কিন্তু রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রীর এই দাবি মানতে নারাজ সূর্যবাবু। এ দিন বামফ্রন্ট বিধায়কেরা বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন না। পরে সন্ধ্যায় বিধানসভার বাইরে সূর্যবাবু বলেন, “কীসের উদ্বৃত্ত? বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তো চাহিদার উপরে নির্ভর করে। শিল্প নেই। তাই বিদ্যুতের চাহিদাও নেই।” লোডশেডিং যে একেবারেই হচ্ছে না, তাও মানতে নারাজ সূর্যবাবু। জেলা শহরে গেলেই লোডশেডিংয়ের চিত্রটা ঠিক ঠিক পাওয়া যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিন্তু তাঁরা বিধানসভায় ছিলেন না
কেন? সূর্যবাবুর বক্তব্য, “কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে এ দিন অধিবেশন হবে বলে কিন্তু বলা ছিল না। ওঁরা ওঁদের খুশিমতো বিধানসভা চালু থাকবে বলে ঠিক করে নিলেন। সেই কারণেই আমরা যাইনি।”
বিদ্যুৎ শিল্পমহলের একাংশও আগেই জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা বেশ কম। এর প্রধান কারণ রাজ্যে গত কয়েক বছর ধরে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া প্রায় থমকে রয়েছে। নতুন কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে না। ফলে চাহিদার তুলনায় রাজ্যের জোগানের ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে বাড়তি আরও ১৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ছে রাজ্যের। শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা না বাড়লে তখন ওই বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত হয়ে যাবে বলে শিল্পমহলের একাংশের দাবি। বিদ্যুৎ দফতরের হিসেবে, ২০১১-’১২ আর্থিক বছরে রাজ্যে যেখানে কমপক্ষে ৮ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে ধরা হয়েছিল, তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৪ শতাংশে। অথচ ওই চাহিদা ধরে বিদ্যুৎ জোগানের ব্যবস্থা আগে থাকতেই করে রাখা হয়েছিল।
বিধানসভার বাইরে বিদ্যুৎমন্ত্রী এ দিন জানান, ২০১৫ সালের মধ্যে সাগরদিঘিতে ৫০০ মেগাওয়াট করে নতুন দু’টি ইউনিট বসছে। সেখান থেকে মোট ১০০০ মেগাওয়াট এবং ডিপিএল-এর একটি ইউনিট থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। পাশাপাশি হলদিয়ায় সিইএসসি ৩০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট বসাচ্ছে। ফলে ওরাও ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করবে। এই প্রকল্পগুলি উৎপাদন শুরু করে দিলে রাজ্যের হাতে অনেকটাই বিদ্যুৎ যে উদ্বৃত্ত থেকে যাবে বলে মণীশবাবু নিজেও জানান।
কিন্তু নতুন শিল্প না এলে কী হবে সেই উদ্বৃত্ত
বিদ্যুৎ দিয়ে? এ দিন সন্ধ্যায় বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, চাহিদা বাড়বে এটা ধরে নিয়েই বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হয়। এক জায়গায় থেমে থাকার উপায় নেই। তাঁর দাবি, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ চলছে জোর কদমে। রাজ্যে শিল্পায়ন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ রাজ্যের কাজেই লাগবে। |