সুরাহা নেই মানসিক চাপের
কর্মী নেই, ডিজির দাওয়াই নিয়ে সংশয়ে পুলিশকর্তারা
চাপ কমাতে গিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে পুলিশ!
রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি এক নির্দেশ জারি করে বলেছেন, মানসিক চাপ কাটাতে প্রতিটি বাহিনীর সব অফিসারকে নিয়মিত যোগ ও ধ্যান করতে হবে। জেলা বা রাজ্যস্তরে বছরে এক বার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিলেই চলবে না, কাজের ফাঁকে টেবিল টেনিস, দাবা ও ক্যারমের মতো ‘ইন্ডোর গেম’ খেলাও অভ্যাস করতে হবে পুলিশকর্মীদের। মন আর শরীর ভাল রাখতে যেতে হবে জিমেও।
খেলাধুলোর পাশাপাশি বই পড়াতেও মনোনিবেশ করতে বলেছেন ডিজি। চাপ কমাতে বাহিনীর সদস্যেরা যাতে গল্প-উপন্যাস বা অন্য ধরনের বই পড়তে পারেন, তার জন্য সব জেলা পুলিশের সদর দফতর ও ব্যাটালিয়নে গ্রন্থাগারের বন্দোবস্ত করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বই পড়ায় কর্মীদের আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনে গ্রন্থাগার দফতরের সাহায্য নিয়ে ভ্রাম্যমান পরিষেবা চালুর কথাও বলেছেন রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশের মানসিক চাপ দিন দিন বাড়ছে এবং তা থেকে মুক্তি পেতে ডিজি-র নির্দেশ মেনে চলা যে জরুরি, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন জেলা পুলিশ ও ব্যাটালিয়নের অধিকাংশ আধিকারিক। যার মূল কারণ লোকাভাব। দীর্ঘ দিন পুলিশে নিয়োগ না হওয়ায় পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, রাজ্যের বেশির ভাগ থানা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম লোক নিয়ে চলছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, থানাগুলিতে ‘টেবিল ডিউটি’ (সাধারণ মানুষের অভিযোগ নেওয়া, লক-আপে নজর রাখা, টহলদারি পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রাখা ইত্যাদি) ধরলে ১০-১২ ঘণ্টার আগে ছাড়া পাচ্ছেন না এক-এক জন অফিসার। বহু ক্ষেত্রে অফিসার ছাড়াই টহলদারিতে বেরোতে হচ্ছে কনস্টেবলদের।
সব চেয়ে ‘করুণ’ অবস্থা তদন্তকারী অফিসারদের। সাব ইনস্পেক্টরদের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকায় এক জন অফিসারকে এক সঙ্গে কমপক্ষে সাত-আটটি মামলার তদন্ত করতে হচ্ছে। তার উপরে রোজকারের আইন-শৃঙ্খলা সামলানোর দায়িত্ব তো রয়েইছে। যার ফলে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না অধিকাংশ তদন্ত। সুরাহা পাচ্ছেন না অভিযোগকারীরা। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে দাবা বা ক্যারম খেলার জন্য অফিসারদের ছাড়া যাবে, ভেবে পাচ্ছেন না থানার ওসি-রা। হাওড়ার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ব্যারাকপুরে রাজ্য পুলিশ ট্রেনিং কলেজে বছরভর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও হামেশাই নানা রকম ‘কোর্স’ করায়। পুলিশকর্মীদের ওই সব প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়া আবশ্যিক হলেও থানা চালানোর স্বার্থে অধিকাংশ সময়েই অফিসারদের ছাড়া যায় না।”
ডিজি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, জেলা পুলিশ ও ব্যাটালিয়নের পদস্থ কর্তারা নিয়ম করে প্রতি মাসে নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে একান্তে কথা বলবেন। খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করে চাকরিগত সুবিধা-অসুবিধা ছাড়াও তাঁদের পারিবারিক সমস্যার কথাও শুনতে হবে অফিসারদের। প্রয়োজনে বাড়ির লোকের সঙ্গেও কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন ডিজি। ডিজি-র নির্দেশ, মনোবিদ ও মনোচিকিৎসকদের দিয়ে নিখরচায় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ সুপার ও কম্যান্ডান্টদের।
কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটতে গেলে সমস্যা কমার বদলে বাড়বে বলেই মনে করছেন পুলিশকর্তারা। একাধিক পুলিশ সুপার বলেন, “বাহিনীর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই অধিকাংশ ছুটি না পাওয়ার অভিযোগ করবেন। আমরাও জানি ওঁদের নালিশ যথার্থ। কিন্তু আমরাও নিরুপায়।” আগে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনতে জেলায় প্রতি তিন মাস অন্তর জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটির (জেসিসি) মিটিং হত। এসপি, ডিএসপি ছাড়াও পুলিশ সংগঠনের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে অংশ নিতেন। কিন্তু বহু দিন সে সবও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে মত আদান-প্রদানের পথও বন্ধ।
মানসিক চাপ কাটাতে আরও একটি পথের খোঁজ দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা। বলেছেন, প্রতিটি বাহিনীর সদস্যদের কমপক্ষে আধ ঘণ্টা করে যোগ ও ধ্যান করতে হবে। এর জন্য স্থানীয় স্তরে প্রশিক্ষকও নিয়োগ করা যেতে পারে। শুধু চাকরিজীবনেই নয়, বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের প্রশিক্ষণেও যাতে যোগ-ধ্যান পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেই ব্যাপারে রাজ্য পুলিশ অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.