আজ, রবিবার দিনটা প্রদেশ কংগ্রেস দফতরেই কাটাবেন তৃণমূলের সাংসদ সোমেন মিত্র এবং তাঁর স্ত্রী তৃণমূল বিধায়ক শিখা মিত্র।
তৃণমূলের অন্দরে ইদানীং সোমেন-শিখার সঙ্গে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খানিকটা ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে। যেমন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ‘তিক্ত’ হয়েছে তৃণমূলের। ফলে মিত্র-দম্পতির বিধান ভবনে যাওয়া নিশ্চিত ভাবেই কিছু ‘জল্পনা’র জন্ম দেবে।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রখ্যাত চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই অবশ্য সোমেন-শিখার বিধান ভবনে যাওয়া। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চিন্ময় গুহও ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন। সোমেনবাবু শনিবার জানান, এর মধ্যে বিধান-স্মরণ ছাড়া ‘অন্য কিছু’ খোঁজা নিরর্থক। তাঁর কথায়, “আমি ওই অনুষ্ঠানে যাব। সারাদিন থাকবও। প্রতি বারই যাই। গত বছরও গিয়েছিলাম। আগামী বছরও যাব। কারণ আমি বিধান রায় ট্রাস্টের চেয়ারম্যান।” কিন্তু এখন কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের যা সম্পর্ক, তাতে তিনি বিধান ভবনের অনুষ্ঠানে গেলে তো ‘জল্পনা’র অবকাশ থেকেই যাবে। সোমেনবাবুর জবাব, “এর মধ্যে নিছক বিধান-স্মরণ ছাড়া আর কিছু নেই। কেউ অন্য কিছু খুঁজলে সেটা তাঁর ব্যাপার।” |
বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিন উপলক্ষে পরিষ্কার করা হচ্ছে
তাঁর মূর্তি। শনিবার মহাকরণের সামনে। ছবি: সুদীপ আচার্য |
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিধানসভার লবিতে বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন করা হয়েছে শুক্রবার। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। প্রকাশ্যে না-বললেও সোমেনবাবুর ঘনিষ্ঠদের দাবি, তিনি বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন দু’দিন আগে পালন করা ‘মেনে নিতে পারেননি’। সোমেনবাবুর স্ত্রী শিখাদেবী তৃণমূলের বিধায়ক। তাঁকে কিন্তু শুক্রবার বিধানসভার লবিতে বিধান-স্মরণ অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। আজ, রবিবার বিধান ভবনে শিখাদেবী একটি আলোচনাচক্রে যোগ দেবেন।
সেখানে সোমেনবাবুও থাকবেন। শিখাদেবী অবশ্য ইদানীং এমনিতেই বিধানসভায় যথেষ্ট ‘অনিয়মিত’। দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী রাজনীতিতে তিনি ‘ক্ষুব্ধ’। তাই দলনেত্রী মমতার সঙ্গে তাঁর ‘দূরত্ব’ বেড়েছে।
তারই প্রভাব পড়েছে বিধানসভায় তাঁর হাজিরায়। দলের অন্যান্য বৈঠকেও তিনি খানিকটা ‘অনিয়মিত’ বলেই দলীয় নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন।
কয়েকমাস আগেও একই ভাবে প্রদেশ দফতরের অদূরে রামলীলা ময়দানে একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে সোমেনবাবু গিয়েছিলেন। একই মঞ্চে ছিলেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপবাবুও। একইদিনে তৃণমূল ভবনে দলের সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মমতা।
দলীয় বৈঠকে না-গিয়ে সোমেনবাবু রামলীলায় যাওয়ার ফলে বিতর্ক হয়েছিল। সোমেনবাবু অবশ্য তখন বলেছিলেন, “ওই অনুষ্ঠানের সংগঠকদের আমি অনেক আগেই পাকা কথা দিয়েছিলাম যাব বলে। আর দিল্লিতে একটি বৈঠক থাকায় আমি দলের বৈঠকে যেতে পারব না বলে আগেই নেত্রীকে জানিয়ে রেখেছিলাম।”
এমনিতেই দলের অন্দরে একাংশ সোমেনবাবুকে এখনও ‘কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠ’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ও সুবিদিত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আবহে যখন প্রণববাবুর বিরোধিতা করছে দল, তখন সোমেনবাবুর প্রদেশ দফতরে যাওয়া ‘অন্য মাত্রা’ পাবে বলেই মনে করছে তৃণমূল শিবির। |