কলকাতায় পুরনো এলাকার বাইরে সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন, বানতলার মতো কয়েকটি এলাকায় নতুন ইনিংস শুরু করতে পারে ট্রাম। মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তি বদলে ট্রামকে মাটি থেকে উঁচুতে দ্রুতগামী ‘মনোরেল’ বা ‘লাইট রেল ট্রানজিট’-এ রূপান্তরের চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে। আর এ ভাবে কলকাতার ট্রামের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার কাজে রাজ্যের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়েছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। শনিবার রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে এ কথা জানিয়েছেন নগরোন্নয়ন সচিব সুধীর কৃষ্ণ।
ব্রিটিশরা এক সময়ে মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, পটনা, কানপুর ও নাসিকেও ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু করে। কোথাও কোথাও সেগুলি সরিয়ে পেট্রোল বা বিদ্যুৎ-চালিত এক কোচের ট্রামও চালু হয়। কিন্তু নানা কারণে সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। আজ শুধু কলকাতাতেই টিকে রয়েছে ট্রাম। সম্প্রতি কলকাতায় এসে এ শহরের ট্রামের অবস্থা খতিয়ে দেখেছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ইনস্টিটিউট অব আরবান ট্রান্সপোর্ট’ (আইইউটি)-এর প্রতিনিধিরা। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা ট্রামের জন্য একটি ‘লাইফ-লাইন’ খুঁজতে উৎসাহী হয়েছে কেন্দ্র। নগরোন্নয়ন সচিব বলেন, “সমীক্ষার ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে সরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, কেউই ট্রাম তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। কলকাতার পরিচিতির সঙ্গে ট্রাম এখনও অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে।” |
তথাকথিত শ্লথ গতির যান ট্রামের এমন দুরবস্থা ৫০-৬০ বছর আগে ইউরোপেও দেখা গিয়েছিল। গতিতে গাড়ির কাছে পিছিয়ে পড়ে ট্রাম। কিন্তু সত্তরের দশকে মাত্রাছাড়া তেলের ঘাটতির পরে এই পরিবেশ-বন্ধু যানের মর্ম বোঝে ইউরোপ। প্রযুক্তিগত বিকাশে ট্রামকে দ্রুতগামী ট্রেনের মতো ‘লাইট রেল ট্রানজিট’ (এলআরটি)-এ ক্রমশ পাল্টে ফেলা হয়। এই দৃষ্টান্ত তুলে ধরেই কলকাতার ট্রামের পুনরুজ্জীবনের রূপরেখা ঠিক করতে বলেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব।
ট্রাম বাঁচানোর প্রকল্পের রিপোর্ট তৈরির জন্য অর্ধেক ব্যয় বহন করতে তাঁরা রাজি বলেও জানিয়েছেন কৃষ্ণ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ট্রামের উন্নতির পরিকল্পনা রচনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কৃষ্ণ বলেন, “বাণিজ্যিক লাভের কথা মাথায় রেখে ট্রাম বাঁচানোর প্রকল্প ঠিক হলে আমরা ২০ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করব।” তাঁর মতে, কলকাতার সেকেলে ট্রামকে দ্রুতগামী এলআরটি-তে রূপান্তর করা জরুরি। সম্প্রতি দিল্লিতেও এলআরটি চালু করা নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক কলকাতার পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করেছে। মন্ত্রকের আধিকারিকদের মতে, ঘন বসতিপূর্ণ শহর কলকাতায় এলআরটি দিল্লির থেকেও বেশি সফল হবে।”
পর্যটনের প্রসারে ট্রামকে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন সচিব এ দিন কলকাতার পরিবহণ ও পুরকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ট্রাম, বিলাসবহুল ক্যাফেটেরিয়া-যুক্ত ট্রাম, এক কামরার ট্রাম রাস্তায় নামানোর খুঁটিনাটি নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, গড়ের মাঠের মতো এলাকা বা শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনে নতুন ধাঁচের ট্রাম চালানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। কলকাতা ট্রামওয়েজের চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “ট্রাম নিয়ে দিল্লির কর্তাদের মনোভাব আশার আলো দেখাচ্ছে। কলকাতায় ট্রাম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাসভা করারও প্রস্তাব
রেখেছি আমরা।” |