নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সোনার পদক, শংসাপত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট পর্যন্ত জমা রেখে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে জাতীয় অ্যাথলিট পিঙ্কি প্রামাণিককে ফের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার জন্য শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছেন বারাসত আদালতের বিচারক।
আগামী ১২ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করেন বারাসত আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অনিতা মাথুর। এই সময়ের মধ্যেই পিঙ্কির হরমোন ও ক্রোমোজোম পরীক্ষা করিয়ে সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে পুলিশকে। তত দিন পর্যন্ত পিঙ্কির ঠাঁই হচ্ছে দমদম সেন্ট্রাল জেলের ‘বিশেষ’ ঘরে।
পিঙ্কিকে এক ঝলক দেখার জন্য এ দিনও বারাসত আদালতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। বিচারকের নির্দেশ শোনার জন্য আদালতের এজলাসে তিল ধারণের জায়গা ছিল না বললেই চলে। লালের উপরে নীল স্ট্রাইপ দেওয়া টি-শার্ট পরা পিঙ্কি অবশ্য ছিলেন ভাবলেশহীন। কারও কারও প্রশ্নের উত্তরে শুধু সামান্য হাসছিলেন। পিঙ্কির আইনজীবী তীর্থঙ্কর ঘোষ, মাধব সান্যাল, তুহিন রায় ও অমলজ্যোতি ঘোষ আদালতের কাছে তাঁদের মক্কেলের জামিনের আবেদন জানান। আইনজীবীরা বলেন, দু’টি হাসপাতালের মোট ১৮ জন চিকিৎসকের (বারাসত হাসপাতালে সাত এবং এসএসকেএম হাসপাতালে ১১) মেডিক্যাল বোর্ড পিঙ্কিকে পুরুষ আখ্যা দিতে পারেনি। তিনি ধর্ষণ করেছেন, নাকি ধর্ষিত হয়েছেন কোনও সদুত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নের। এর পরে ফের ডাক্তারি পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে রেলে কর্মরত এক জন জাতীয় খেলোয়াড়কে আটকে রাখার অর্থ হয় না। পাসপোর্ট-সহ পিঙ্কির সমস্ত নথিপত্র জমা রেখে তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক। আইনজীবীরা কথা দেন, পিঙ্কি এখন যেমন আদালত এবং পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন, পরবর্তী কালেও তেমনই সাহায্য করবেন।
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সরকার পক্ষের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন দে জানান, এই মামলার জন্য পিঙ্কি পুরুষ না মহিলা, তা জানা জরুরি। এবং শুধু যথাযথ ডাক্তারি পরীক্ষাতেই সেটা জানা সম্ভব। সেই জন্যই পিঙ্কির পরবর্তী ডাক্তারি পরীক্ষাগুলির আবেদন জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক জামিনের আবেদন খারিজ করে পিঙ্কিকে ফের জেল-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পরে পিঙ্কির আইনজীবীরা জানান, একাধিক জায়গায় ঘোরার বদলে এ বার এমন একটি জায়গায় তাঁদের মক্কেলের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হোক, যেখানে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
পিঙ্কিকে ‘পুরুষ’ বলে অভিহিত করে বাগুইআটির এক মহিলা সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা-সহ একাধিক অভিযোগ তোলেন। তদন্তে নেমে বাগুইআটি থানার পুলিশ পিঙ্কিকে গ্রেফতার করে। তার পর থেকে প্রথমে একটি নার্সিংহোম, বারাসত হাসপাতাল এবং রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে মেডিক্যাল পরীক্ষা হয় পিঙ্কির। কিন্তু কোনও হাসপাতালই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হরমোন ও ক্রোমোজোম পরীক্ষার প্রয়োজন। এ বার সেই ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |