গরমকালে রক্তের সঙ্কটের ‘পরম্পরা’ কিছুতেই ভাঙা যাচ্ছে না বলে হতাশ কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, মে মাসের তীব্র গরমে এক ধাক্কায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল রক্তদান শিবিরের সংখ্যা। অনেক ক্ষেত্রে আবার শিবির হলেও তাতে প্রত্যাশা মতো লোক হয়নি। এপ্রিলে সঞ্চিত রক্তে মে মাসটা কেটে যায়। তবে, মে মাসে শিবিরের অভাব টের পাওয়া গিয়েছে জুনের শেষ দিকে। গত সপ্তাহে প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কেই তীব্র রক্তসঙ্কট ছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ২৪ ও ২৫ জুন ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা হয়েছিল। ফলে রক্তদাতা বেড়েছিল শিবিরে। তার জেরে জুনের শেষ সপ্তাহে সঙ্কট কিছুটা সামলানো গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কের প্রধানেরা। কিন্তু কতদিন সরবরাহ ঠিক থাকবে, তা এখনই বলতে পারছেন না তাঁরা।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে প্রসূন ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “গত দু-তিন সপ্তাহে অধিকাংশ ক্যাম্পেই লোক হয়নি। এখনও একটা অদ্ভুত ধারণা অনেকের আছে যে, গরমে রক্ত দিলে শরীর খারাপ হয়। রক্ত নাকি পূরণ হয় না। কোনও ক্যাম্পে ১০০ জন আসার কথা থাকলে ৬০ জন এসেছেন। আমাদের খুব টানাটানি গিয়েছে। নেগেটিভ রক্ত এখনও নেই।”
প্রায় একই কথা বলেছেন এসএসকেএম, এনআরএস, আর জি করের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এনআরএসের তরফে দিলীপ পণ্ডার বক্তব্য, “গত সপ্তাহে খুব হিসেব করে রক্ত দিতে হয়। হয়তো হাসপাতালে কোনও অপারেশন হচ্ছে, চার ইউনিট রক্ত লাগবে। অন্য সময়ে এক সঙ্গে চার ইউনিট দিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন খুব অভাবের জন্য বলেছি, একটা করে ইউনিট নিতে হবে। লাগলে ফের এক ইউনিট নেবে। কোনও ভাবে অপচয় করা চলবে না।” এসএসকেএমের ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান শ্যামলাবাঈ সাহা আবার জানান, সঙ্কটের মোকাবিলায় যাঁরাই এখন রক্ত নিতে আসছেন, তাঁদের বলা হচ্ছে এক ইউনিট রক্ত দান করলে তবেই এক ইউনিট দেওয়া হবে। রক্তের কার্ড থাকলেও রক্ত দিতে হবে।
শ্যামলাবাঈ বা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান মধুসূদন মণ্ডলের মতে, এই সঙ্কটের সময়ে রক্তের অপচয় কমাতে প্রত্যেক হাসপাতালে একটি করে কমিটি তৈরি করা উচিত। এই কমিটি কী করবে? তাঁর বক্তব্য, “অনেক সময়ে রোগীর জন্য প্রয়োজনের থেকে বেশি রক্ত নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেই রক্ত আর ফেরত নেওয়া যায় না। নষ্ট হয়। অন্তত গরমকালে যেন এটা না হয়, তা স্বাস্থ্য দফতরের দেখা উচিত।”
এ দিকে, রাজ্য সরকার কিন্তু রক্তসঙ্কটের কথা উড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় উল্লেখ পর্বে কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্রের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানান, সারা বছর যত রক্তের প্রয়োজন তার ৮৭ শতাংশই চলতি বছরে রাজ্য সরকার সংগ্রহ করে ফেলেছে। ফলে, রক্তের সঙ্কট হওয়ার কথাই নয়। তাঁর দাবি, যদি কোথাও রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়, তবে তা নিশ্চিত ভাবে কৃত্রিম সঙ্কট। |