বাড়িকে ‘না জানিয়ে’ টনসিল অপারেশন, কোমায় শিশু
র জি করের মতো নামী সরকারি হাসপাতালে টনসিল অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে ১২ বছরের রাজেশ্বর আজ ছ’মাস কোমায়। শেষ চেষ্টা হিসেবে তাকে নিয়ে ভেলোরে দৌড়চ্ছেন তার বাবা-মা। সেই সঙ্গে তাঁরা তুলে দিয়ে যাচ্ছেন এক গুরুতর প্রশ্ন, রোগীর পরিবারকে অনুমতিপত্রে সই না করিয়ে কোনও অস্ত্রোপচার হয় কী ভাবে? যার কোনও সদুত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, অস্ত্রোপচার করতে হবে, সে কথা তাঁরা ওই কিশোরের পরিবারকে জানিয়েছিলেন। যদিও লিখিত অনুমোদনের কোনও কাগজ তাঁরা শুক্রবার দেখাতে পারেননি।
রাজেশ্বরের বাবা রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ইএনটির চিকিৎসকেরা তাঁর ছেলেকে পরীক্ষা করে টনসিল অস্ত্রোপচারের কথা বলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কবে অস্ত্রোপচার হবে, সে কথা তাঁরা জানতেন না। অস্ত্রোপচারের আগে তাঁর ছেলের প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়নি। ছেলেকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন।
রাজেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ছবি: এবিপি আনন্দ
আরজিকরের সুপার পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অস্ত্রোপচার চলাকালীন ছেলেটির এপিলেপ্টিক অ্যাটাক হয়। তার জেরেই ওর মস্তিষ্ক অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু এটা আগাম আঁচ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।” মৃগী রোগী হিসেবে কাউকে জানা না থাকলে বা তেমন কোনও উপসর্গ না থাকলে কোনও অস্ত্রোপচারের আগেই মৃগীর পরীক্ষা হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজেশ্বরের বাবা-মা অবশ্য জানান, তাঁদের সন্তানের মৃগী ছিল না। নিজেদের দোষ ঢাকতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে যুক্তি সাজাচ্ছেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, আর জি কর কর্তৃপক্ষের কাছে তার সবিস্তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কারও গাফিলতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৯ জানুয়ারি আরজিকরের ইএনটি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল দমদমের মহেন্দ্র গার্ডেন রোডের বাসিন্দা ১২ বছরের রাজেশ্বর। অস্ত্রোপচারের পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি। তার বাবা রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ওটিতে নিয়ে যাওয়ার পরে আমরা জানতে পারি যে ওর অস্ত্রোপচার হবে। আমরা বার বার জানতে চেয়েছিলাম, মতামত না নিয়ে কেন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু কেউ কোনও উত্তর দেননি। কেন ও কোমায় চলে গেল, সেই প্রশ্নের কোনও উত্তরও আমাদের দেওয়া হয়নি।”
রত্নেশ্বরবাবুর অভিযোগ, হাসপাতালের সুপার, অধ্যক্ষ, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক এমনকী স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের কাছে গিয়েও বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কেউ তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেননি। তাঁর কথায়, “সকলেই আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেছেন। অন্য পথ না পেয়ে তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাই আমরা।”
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। মহাকরণে গিয়ে তাঁর উদ্দেশে চিঠিও লিখে রেখে আসেন। এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রত্নেশ্বরের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব বহন করতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন তিনি। রত্নেশ্বরবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে আমাদের লাখ চারেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ না হলে আরও কত টাকা বেরিয়ে যেত কে জানে। আমি নির্মাণ সংস্থার সামান্য কর্মী। এত খরচের সামর্থ্যই নেই আমাদের।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা জানিয়েছেন, গোড়া থেকেই তাঁরা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করছেন।
ছ’মাস আগে এই ঘটনা ঘটলেও এত দিন পরে কেন বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন তাঁরা? তিনি বলেন, “এতদিন পর্যন্ত আমাদের মনে ক্ষীণ আশা ছিল রাজেশ্বর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দিন কয়েক আগে হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর কোনও আশা নেই। তখনই ঠিক করি, এ রাজ্যে আর নয়। ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও অন্য রাজ্যেই চিকিৎসা করাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.