কনের বয়স কত? কোন ক্লাসে পড়ে? বিডিও-র প্রশ্ন শোনার আগেই কনের বাবা চম্পট দিয়েছিলেন। অগত্যা কপালে চন্দন আঁকা ‘নাবালিকা’ কনেই জবাব দেয়, “ক্লাস সেভেনে পড়ি।” পুরুলিয়া ১ ব্লকের বিডিও মৌসুমি পাত্র এর পরেই নাবালিকা বন্দনা বাউড়ির বিয়ে আটকে দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুরুলিয়া সদরের মহকুমাশাসক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর গ্রাম গাড়াফুসড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। সেই সন্ধ্যায় পাশের গ্রাম কাঁটাবেড়াতেও এক নাবালিকার বিয়ে রোখে প্রশাসন। যে জেলার রেখা কালিন্দী, বীণা কালিন্দীদের হাত ধরে যে বাল্যবিবাহ রোখার অভিযান কার্যত সামাজিক আন্দোলনের চেহারা পেয়েছে, সেই পুরুলিয়ারই মন্ত্রীর গ্রামের এমন ঘটনা বোঝাচ্ছে, অনেক পথ চলা বাকি। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে ওই দুই আধিকারিক যখন দু’টি বাড়িতে যান, তখন বিয়ের আয়োজন প্রায় শেষ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্দনার বাবা, দিনমজুর বাদল বাউড়ি তাঁদের আসার খবর পেয়েই পালান। |
বিডিও বলেন, “বন্দনা জানায়, ওর বয়স ১৮-র কম। ওদের এলাকায় কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ।” বন্দনার মা অঞ্জনা বাউড়িও বলেন, “১৮ বছরের নীচে মেয়েদের বিয়ে দিতে নেই বলে জানতাম না।” মহকুমাশাসক বলেন, “কেন্দায় পাত্রের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে খবর দেওয়া হয়, কনে নাবালিকা হওয়ায় বিয়ে হবে না।”
দীপালি মাহাতোর মা-বাবা নেই। জেঠু-জেঠিমার কাছে মানুষ। এখন পড়াশোনাও করে না। মহকুমাশাসক বলেন, “যখন দীপালির বাড়িতে যাই, তখন সেখানে পুরুষরা ছিলেন না। দীপালি ও বাড়ির মহিলারাও ওর বয়স জানাতে পারেননি। বয়স নিয়ে সন্দেহ থাকায় বিয়ে আটকে দেওয়া হয়। ওর বয়স সর্ম্পকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” দীপালির জেঠুর দাবি, সে প্রাপ্তবয়স্ক।
ওই সংগঠনের তরফে মধুসূদন মাহাতো বলেন, “শান্তিরামবাবুর কাছে বাল্যবিবাহ আটকাতে প্রচারের দাবি জানাব।” শান্তিরামবাবু প্রচার চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন। মহকুমাশাসকের কথায়, “ওরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে ওই পাত্রদের সঙ্গেই যাতে বিয়ে হয়, আমরা সে চেষ্টা করব। ওরা লেখাপড়া করতে চাইলেও প্রশাসন সাহায্য করবে।” |