হাতিয়ার হামজার স্বীকারোক্তি
পাক সরকারি মদতেই মুম্বই হামলা, নিশ্চিত চিদম্বরম
সলামাবাদ যা-ই বলুক, ২৬/১১-র মুম্বই হামলার পিছনে পাকিস্তানের সরকারি মদত ছিল বলে এক রকম নিশ্চিত নয়াদিল্লি।
২০০৮ সালের নভেম্বরে আজমল কাসভরা যখন তাজ হোটেল-নরিম্যান হাউসে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তখন করাচির কন্ট্রোল রুমে বসে তাদের নির্দেশ পাঠাচ্ছিল সইদ জাবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জিন্দল ওরফে আবু হামজা। আজ সেই হামজার স্বীকারোক্তিকে অস্ত্র করেই পাকিস্তানকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর সাফ যুক্তি, “সরকারি মদত ছাড়া ওই ধরনের কন্ট্রোল রুম খুলে বসা সম্ভব ছিল না।” ওই কন্ট্রোল রুমে অন্যদের সঙ্গে লস্কর-ই-তইবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদও উপস্থিত ছিল বলে জানিয়েছেন চিদম্বরম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ছিলেন আইএসআই অফিসাররাও। হামজার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে আর এক দফা তথ্যপ্রমাণ ইসলামাবাদকে দেওয়া হবে বলেও আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন চিদম্বরম।
মুম্বই-হামলার পিছনে পাকিস্তানের সরকারি মদতের অভিযোগ অস্বীকার করে পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক পাল্টা যুক্তি দিয়েছিলেন, হামজা যে আদতে ভারতীয় নাগরিক, নয়াদিল্লির তা মাথায় রাখা উচিত। চিদম্বরমের পাল্টা কটাক্ষ, “স্বীকার করছি, হামজা ভারতীয়। একই ভাবে পাকিস্তানও স্বীকার করুক, সে পাকিস্তানে ছিল। সেখানে সে আজমল কাসভ-সহ দশ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, হিন্দিতে কথা বলতে শিখিয়েছিল। মুম্বইবাসীদের আদবকায়দাও শিখিয়ে পড়িয়েছিল। হামলার সময় হামজা কন্ট্রোল রুমে ছিল এবং গোটা ঘটনার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রী ছিল।” ইসলামাবাদের উপর চাপ বাড়াতে স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহও যুক্তি দিয়েছেন, “পাক সরকারের স্বীকার করা উচিত যে ওরা হামজাকে পাসপোর্ট দিয়েছিল, দু’টি পরিচয়পত্র দিয়েছিল এবং সৌদি আরবের কাছে তাকে পাকিস্তানি বলে দাবি করেছিল।” চিদম্বরম বলেন, “আমরা যে ভাবে বাস্তব তথ্য স্বীকার করছি, পাকিস্তানও সেই ভাবে তথ্যগুলো স্বীকার করুক।”
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হামজা জেরার মুখে জানিয়েছে, বাংলাদেশ হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার আগে সে কিছু দিন কলকাতাতেও ছিল। অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে তাকে দু’মাসের জন্য কাঠমান্ডুতে পাঠানো হয়েছিল। মুম্বই-হামলার সময় করাচির বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্টের মাঝে কায়দাবাদ নামক অঞ্চলে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল। এর পরে লস্কর-জঙ্গিদের গ্রেফতার করার জন্য ভারত তো বটেই, আমেরিকার তরফেও পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি হয়। তাই লস্কর-ই-তইবার সদর দফতর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দুলাই নামের একটি জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় জাকিউর রহমান লকভিকে মুজফ্ফরাবাদের একটি লস্কর-শিবির থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সেই শিবিরে থাকা সত্ত্বেও হামজাকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টে আইএসআই তাকে সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এ জন্য তাকে রিয়াসত আলি নামে পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া হয়। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২৬/১১-র তদন্তে যে সব জায়গাগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অস্পষ্ট ছিল, হামজা তা স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে। কাসভদের কোথায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, কোথায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল, সরকারি স্তরে কী ধরনের সাহায্য মিলেছিল, সবই জেরার মুখে জানিয়েছে সে। চিদম্বরম বলেন, “এ সবই প্রমাণ করে যে এই ধরনের কাজকর্ম সরকারি মদত ছাড়া সম্ভব ছিল না। আবু জিন্দাল পাকিস্তানে যে নিরাপদ স্বর্গ খুঁজে পেয়েছিল, এই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতেই পারি। নির্দিষ্ট ভাবে কে বা কারা তাকে মদত দিয়েছিল, তা পুরো তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই জানা যাবে।”
২৬/১১-র হামলা ছাড়া ২০০৬ সালের আমদাবাদ রেলস্টেশনে বিস্ফোরণ, ঔরঙ্গাবাদের অস্ত্র মামলা এবং জার্মান বেকারির বিস্ফোরণেও হামজা সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে। হামজা আপাতত দিল্লি পুলিশের হেফাজতে। এর পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হবে। হামজাকে জেরা করতে মুম্বই যেতে পারে কলকাতা পুলিশের একটি দলও। আজ চিদম্বরম বুঝিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মসৃণ করার জন্য দু’দেশের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ তৈরির চেষ্টা হবে। কিন্তু সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের উপর চাপ আলগা করার প্রশ্ন নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.