|
|
|
|
মাওবাদী সভা ঘিরল সিআরপি, গুলিযুদ্ধে হত ১৯ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বিজাপুরের গভীর জঙ্গলে বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রাতভর সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ অন্তত ১৯ জন গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে। ছত্তীসগঢ় পুলিশের দাবি, নিহতদের মধ্যে চার জন কট্টর মাওবাদী। বাকিরা সিপিআই (মাওবাদী)-র শাখা গণ মিলিশিয়ার সদস্য। সংঘর্ষে কোবরা বাহিনীর দু’জন-সহ সিআরপিএফের ৬ জওয়ান আহত। ধরা পড়েছেন দু’জন মাওবাদী নেতা। তাঁদের চিকিৎসার জন্য রায়পুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিজাপুর জেলার বাসাগুরা এলাকায় মাওবাদীদের একটি সভা বসেছিল। সেই সভার দিকে এগোনোর সময়েই মাওবাদীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে বাহিনী। তখনই দু’পক্ষে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এই ঘটনায় সিআরপিএফের গুলিতে গ্রামবাসীদের মৃত্যুর অভিযোগকে ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে ছত্তীসগঢ় পুলিশের আই জি মুকেশ গুপ্ত টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেন, “সিলগার জঙ্গলে তিনটি নিরাপত্তা বলয় রেখে মাওবাদী নেতৃত্ব সভা করছিলেন। বাইরের স্তরে ছিল গণ মিলিশিয়ার সদস্যরা। দ্বিতীয় স্তরে লোকাল গেরিলা স্কোয়াড। একেবারে ভিতরের স্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল নেতাদের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী এবং পিএলজিএ-র সদস্যদের হাতে।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “গণ মিলিশিয়ার সদস্যেরা তো গ্রামেরই লোকজন। তাঁরা কী করে সাধারণ গ্রামবাসী হন?”
মাওবাদী দমন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল রাম নিবাস আনন্দবাজারকে বলেন, “নিরীহ গ্রামবাসীরা কি গুলি চালায়? অত রাতে জঙ্গলে গ্রামবাসী কী করছিলেন? যে যা-ই বলুন, রাজ্যে মাওবাদী দমন অভিযানে এটা খুব বড় সাফল্য।” যদিও রাজ্যের বিরোধীরা এই সংঘর্ষকে ‘ভুয়ো’ আখ্যা দিয়ে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
|
ছত্তীসগঢ়ের শক্ত ঘাঁটিতেই বড় ধাক্কা খেল মাওবাদীরা |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এই ছত্তীসগঢ়েই বছর দুয়েক আগে ফাঁদে ফেলে ৭৬ জন সিআরপি জওয়ানকে হত্যা করেছিল মাওবাদীরা। তারও আগে-পরে ছত্তীসগঢ়ের জঙ্গলে একাধিক বার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে তারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতির বিচারে নিরাপত্তা বাহিনীকে টেক্কা দিয়েছে তারা। কিন্তু এ বার নিজেদের শক্ত ঘাঁটিতে প্রথম বড় ধাক্কা খেল মাওবাদীরা। যা নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত রাজ্য প্রশাসন এবং সিআরপি। বৃহস্পতিবার রাতে বিজাপুরের সিলগার জঙ্গলে মাওবাদী-সিআরপি গুলিযুদ্ধে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। বিরোধীরা নিহতদের সাধারণ গ্রামবাসী বললেও প্রশাসন ও সিআরপি তা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, নিহতরা কট্টর মাওবাদী জঙ্গি।
মাওবাদী প্রভাবিত বস্তারের বিজাপুর জেলার জগরগুন্ডা এবং বাসাগুরার কাছে সিলগার জঙ্গলে বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ জানায়, বাসাগুরা থানার কোরসাগুরা গ্রামে মাওবাদীদের ডাকে একটি সভা বসেছিল। সেই খবর পেয়ে সিআরপির ৮০ নম্বর ব্যাটালিয়ন ও রাজ্য পুলিশের যৌথ বাহিনী সেদিকে এগোতে থাকে। তাদের উপস্থিতি আঁচ করে ঘন জঙ্গলের আড়াল থেকে অন্ধকারের মধ্যেই মাওবাদীরা গুলি চালাতে থাকে। নয়াদিল্লিতে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম বলেন, “সিআরপিএফ এবং পুলিশের পরিকল্পিত অভিযান ছিল এটি। ওই এলাকায় যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে হামলা চলে। দলে প্রায় ৪৫ জন মাওবাদী ছিল। হামলায় সিআরপিএফের ৬ জন জখম হন। দু’জনের আঘাত গুরুতর। হেলিকপ্টারে তাঁদের রায়পুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি, চিদম্বরম বলেন, “সংঘর্ষে সোমুলি, নাগেশ এবং মহেশ নামে তিন গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় মাওবাদী নেতাও নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পরে ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি দেহ উদ্ধার হয়। আহত অবস্থায় দুই মাওবাদী নেতা ধরা পড়েছেন।”
সিআরপিএফের প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সিলগার জঙ্গলে মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটিতে আঘাত হানতে দন্তেওয়াড়ার জগরগুন্ডা ও চিন্তলনাড় এবং বিজাপুর জেলার বাসাগুরা থেকে সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের বাহিনী পাঠানো হয়। এর আগে কোনও দিন মাওবাদীদের ওই শক্ত ঘাঁটিতে বাহিনী যায়নি। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে দু’পক্ষে গুলি বিনিময় চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতদের মধ্যে বছর চারেক আগে দন্তেওয়াড়া জেল ভেঙে পালানো মাওবাদী নেতা ইরপা সুরেশও আছেন। ছত্তীসগঢ় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল-সহ বিরোধী নেতারা অবশ্য এই সংঘর্ষকে ‘ভুয়ো’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কোন্টার বিধায়ক কাওয়াসি লাখমা-র নেতৃত্বে ১১ সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী দল তৈরি করেছে কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ়ের সিপিআই নেতা, দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য চিত্তরঞ্জন বকসি টেলিফোনে বলেন, “এটা সংঘর্ষ নয়, গণহত্যা। এই ঘটনায় মহিলা, এমনকী শিশুও মারা গিয়েছে। এর বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।” তবে ছত্তীসগঢ় পুলিশের আইজি মুকেশ গুপ্ত বা মাওবাদী দমন অভিযানের ভারপ্রাপ্ত রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি রাম নিবাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, নিহতরা মাওবাদী-ই। |
|
|
|
|
|