বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামোর খোলনলচে সম্পূর্ণ বদলানোর কাজে হাত দিয়েছে সিইএসসি। ভবিষ্যতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে যাতে কোনও রকম যান্ত্রিক বিভ্রাট না দেখা দেয়, তাই এই উদ্যোগ। এই কাজে চলতি আর্থিক বছরেও ৬০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে বলে সংস্থা সূত্রে খবর।
সিইএসসি সূত্রে খবর, নতুন সাবস্টেশন তৈরির পাশাপাশি বাড়ানো হবে পুরনো সাবস্টেশনগুলির বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষমতা। বসানো হচ্ছে নতুন হাই-টেনশন লাইন ও ট্রান্সফর্মার। এ ছাড়া, সিইএসসি এলাকায় যে ১০০টি ডিস্ট্রিবিউশন স্টেশন রয়েছে সেগুলি স্বয়ংক্রিয় করে ফেলার কাজও আগামী দু’বছরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থা সূত্রে খবর, গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কোনও ত্রুটি যাতে সমস্যায় না ফেলে তাই এই উদ্যোগ। কারণ, প্রতি বছর সিইএসসি এলাকায় গৃহস্থ বিদ্যুতের চাহিদা যে ভাবে বাড়ছে তাতে এই ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে না সাজালে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই গত দু-তিন বছর ধরে পুনর্গঠনের কাজে অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
সিইএসসি-র এক কর্তা জানান, এ বছর গ্রীষ্মে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হয়েছিল। ৪ জুন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সর্বোচ্চ। চাহিদার সূচক ছুঁয়েছিল ১৯০৪ মেগাওয়াট। সিইএসসি এলাকার মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় যে ভাবে বহুতল আবাসন বা বাণিজ্যিক ভবন গড়ে উঠছে, তাতে সরবরাহ পরিকাঠামো ঢেলে না সাজালে আগামী দিনে সামাল দেওয়া যাবে না বলেই জানান ওই কর্তা। তিনি আরও জানান, ঘরে ঘরে বাড়ছে এসি-র ব্যবহার। এ ছাড়া, তৈরি হচ্ছে নতুন এয়ারপোর্ট, গড়িয়া থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত শুরু হয়েছে মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের কাজও। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই পুরনো পরিকাঠামোর উপর আর ভরসা করে থাকা যাচ্ছে না।
বেসরকারি এই বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাটির পরিষেবা এলাকায় প্রায় সাত হাজার ট্রান্সফর্মার, ১৭০০ ফিডার এবং ১৫টির মতো সাবস্টেশন রয়েছে। জানা গিয়েছে, সিইএসসি-র কর্তারা নিজেদের পরিকাঠামোগত ত্রুটি ধরতে পাড়ায় পাড়ায় রীতিমতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছেন। ট্রান্সফর্মারগুলির লোড নেবার ক্ষমতা বুঝতে সেগুলির উপর বসানো হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় মিটার। পুরনো লাইনগুলির পাশে নতুন করে কেব্ল লাইন পাতা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে দুর্বল ফিডারগুলিকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া, চারিদিক ঘেরা ঘরের মধ্যে ‘গ্যাস ইনস্যুলেটেড সাবস্টেশন’ তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। যাতে ঝড়-বৃষ্টির সময়ে গাছের ডাল বা অন্য কিছু সাবস্টেশনের উপরে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন না হয়।
সংস্থার এক কর্তা জানাচ্ছেন, কোনও এলাকার পরিকাঠামো যাতে দুর্বল না থেকে যায় তাই সিইএসসি এলাকার পুর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্রই এই কাজ চলবে। আগামী বছরও এই কাজে কমবেশি ৭০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে বলে জানান তিনি। |