বিয়ের সময় রাজেশ গিরিকে নগদ অর্থ ও জিনিসপত্র মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার যৌতুক দেওয়া হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করল নববধূর পরিবার। আগের বিয়ের কথা লুকিয়ে রাজেশ গত বুধবার স্বভূমিতে ফের বিয়ে করেন ওই তরুণীকে। ওই বিবাহবাসরেই দু’বছর আগের বিয়ের প্রমাণপত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলেন পূজা কৌর। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিবাহবাসর থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করে রাজেশ ও তাঁর বাবা কৃষ্ণভগবান গিরিকে।
বিয়ের সময়ে রাজেশ ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়েছেন শুনে পূজা কৌর এ দিন বলেন, “টাকার লোভেই ফের বিয়ে করতে গিয়েছিল রাজেশ। আমি গরিব পরিবারের মেয়ে। রাজেশ মাঝেমাঝেই বলত, ‘তোমার বাবা কি আমাকে যৌতুক দিতে পারবে?’।”
|
পূজা কৌর |
পুলিশ সূত্রের খবর, নববধূ নিজেও এক জন আইনজীবী। কিন্তু মানসিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় তিনি নিজে থানায় আসেননি। তাঁর বদলে বৃহস্পতিবার রাতে ফুলবাগান থানায় গিয়ে রাজেশ এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন নববধূর দাদা সন্দীপ গিরি এবং কাকা বিশাল গিরি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিয়ে ঠিক হওয়ার সময় আগের বিয়ের কথা পুরোপুরি গোপন করা হয়েছিল বলে সন্দীপ এবং বিশাল থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন। পরে সন্দীপ বলেন, রাজেশরা যে ভাবে আমাদের ঠকিয়েছে, তাতে ওঁদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।
নববধূর পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) অরুণ রাইয়ের এজলাসে রাজেশ এবং কৃষ্ণভগবানকে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের ৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন সরকারি আইনজীবী অসীম কুমার বলেন, “নববধূর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজেশ, কৃষ্ণভগবান, রাজেশের মা রাধা এবং বোন বিনীতা গিরির বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং ষড়যন্ত্রের মামলা দায়ের হয়েছে।” রাধা এবং বিনীতাকে অবশ্য এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। |
যৌতুকের তালিকা |
গয়না-সাড়ে পাঁচ লক্ষ
বরের আংটি-দেড় লক্ষ
নগদ-দেড় লক্ষ
অন্যান্য সামগ্রী-দেড় লক্ষ |
*(সব অঙ্ক টাকায়) |
|
অসীমবাবু জানান, ২৪ জুন তিলক অনুষ্ঠানে রাজেশ দেড় লক্ষ টাকা দামের আংটি এবং তার বাবা-মা পাত্রীপক্ষের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নগদ নিয়েছিলেন। ২৭ তারিখ বিয়ের অনুষ্ঠানে রাজেশের পরিবার নগদ ১ লক্ষ টাকা, সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার গয়না-সহ কয়েক লক্ষ টাকার জিনিসপত্র নিয়েছিল।
শুক্রবার শিয়ালহের ষষ্ঠ বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট লীনা লামার কাছে গোপন জবানবন্দি দেন রাজেশের স্ত্রী পূজা কৌর। সেই জবানবন্দি পরে এসিজেএম অরুণ রাইয়ের কাছে পাঠানো হবে। পাশাপাশি, এ দিনই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে যান চিৎপুর থানার তদন্তকারী অফিসার লোকনাথ অধিকারী। সেখান থেকে তিনি পূজা এবং রাজেশের বিয়ে সম্পর্কিত নথিপত্র নিয়ে যান বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এই ঘটনার পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাতেই সিপিনকুমার রাই এবং কুমারনন্দন সিংহ নামে রাজেশের দুই আত্মীয়কে গ্রেফতার করে ফুলবাগান থানা। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার স্বভূমি-র বিবাহবাসরে এক চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনতাই এবং সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মারধরের অভিযোগে জড়িত অভিযোগে এই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ক্যামেরাটিও। এই দুই ধৃতকেও এ দিন শিয়ালদহের এসিজেএম অরুণ রাইয়ের এজলাসে হাজির করানো হলে তাঁদেরও ২ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |