রিজেন্ট পার্কের বধূ পামেলা মিত্র আনন্দের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। মৃতার পরিবারের তরফে শুক্রবার পুলিশের কাছে পামেলার স্বামী জয়দীপ আনন্দের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারই ভিত্তিতে পুলিশ জয়দীপের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে। জয়দীপ অবশ্য এখনও ‘নিখোঁজ’।
বৃহস্পতিবার সকালে রিজেন্ট পার্কের অশোকনগরের একটি ফ্ল্যাট থেকে পামেলা মিত্র আনন্দ (৩৫) নামে ওই বধূর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। পরে তাঁর হাতে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল, ‘‘পম্পাই যখন থাকল না, আমিও চললাম। আমারও দেহ পাওয়া যাবে।’’ পুলিশের অনুমান, ওই চিঠিটি তাঁর স্বামী জয়দীপ আনন্দের লেখা। পুলিশ জানায়, পামেলা একটি পাঁচতারা হোটেলে ‘ট্রেনি সিকিওরিটি’র কাজ করতেন। জয়দীপ একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী।
বৃহস্পতিবার পামেলার এক আত্মীয় পুলিশকে ফোনে জানান, তাঁদের ফ্ল্যাটের গ্রিলে বাইরে থেকে তালা রয়েছে। তবে গ্রিলের ভিতরের দরজা খোলা। পুলিশ এসে দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় রয়েছে পামেলার দেহ। হাতে ওই চিঠি।
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা হয়, স্ত্রীকে বাথরুমে ঝুলতে দেখে দেহটি ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেন জয়দীপ। এর পরে চিঠিটি লিখে পামেলার হাতে গুঁজে দিয়ে ঘরের দরজা খোলা রেখেই বেরোন তিনি। ফ্ল্যাট ছাড়ার আগে গ্রিলের বাইরে জয়দীপই তালা ঝুলিয়ে যান বলেও অনুমান তদন্তকারীদের।
তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই জয়দীপের মোবাইল বন্ধ। তিনি মোবাইলে কাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা জানার চেষ্টা চলছে।
এই অবস্থায় শুক্রবার পামেলার বাবা অরুণ মিত্র পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে তাঁর জামাই জয়দীপের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুন করার অভিযোগ জানান। পুলিশ সেই অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেছে বলে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ সুবার্বান) সুজয় চন্দ জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জয়দীপ-পামেলার ফ্ল্যাট থেকে কিছু চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সব চিঠির ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও অশান্তি চলছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে, মৃত পামেলার হাতে তাঁর ‘স্বামীর লেখা’ যে চিরকুট পাওয়া গিয়েছে, সেটিও সাজানো কি না, সে সম্পর্কে পুলিশ আরও নিশ্চিত হতে পারবে। ঘটনার গতি দেখে তদন্তকারীদের একাংশ ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছেন, ছোট ফ্ল্যাটের বাথরুমে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন স্ত্রী, কিন্তু স্বামী ফ্ল্যাটে থেকেও তা জানতে পারলেন না কেন? পুলিশ জানায়, পামেলার গলায় ক্ষতচিহ্ন মিলেছে।
রিজেন্ট পার্কের একটি তিনতলা বাড়ির একতলার ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন পামেলা ও জয়দীপ। ফ্ল্যাটের মালিক দীপক রায় বলেন, “গত ডিসেম্বরে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন পামেলা ও জয়দীপ। জানুয়ারি মাসে বিয়ে করে তাঁরা ফ্ল্যাটটিতে চলে আসেন।” প্রতিবেশীরা জানান, ওই দম্পতি আশপাশের ফ্ল্যাটের আবাসিকদের সঙ্গেও বিশেষ মেলামেশা করতেন না। পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা কৃষ্ণা পাল বলেন, “আমাদের সঙ্গেও কথাবার্তা বলতেন না ওঁরা। দু’জনেই খুব ভোরে বেরোতেন। ফিরতেন অনেক রাতে।” |