|
|
|
|
দ্রুত সংস্কারের পথে প্রধানমন্ত্রী |
মনমোহন-প্রণব বিরোধের জল্পনা ওড়াল কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের আমলে অর্থ মন্ত্রকের যে সব সিদ্ধান্তের ফলে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়েছিলেন, সেই সব সিদ্ধান্ত বদলাতে চাইছেন মনমোহন সিংহ। ভোডাফোনের উপর কর চাপানো বা কর ফাঁকি প্রতিরোধ আইন নিয়ে বাজেটে অর্থমন্ত্রী যে ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মনমোহন। আর এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দল বিজেপি-র প্রশ্ন, তা হলে কি প্রধানমন্ত্রী ও সদ্য প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ ছিল?
কংগ্রেস অবশ্য জল্পনা খারিজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্ব এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত যে সব পদক্ষেপ করেছেন, তাতে তাঁদের অমত নেই। গোটা  বিশ্বে অর্থসঙ্কটের পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগের বাতাবরণ ধরে রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা। দলকে পিছনে পেয়ে মনমোহনও আর্থিক সংস্কারের পথে দ্রুত এগোতে চাইছেন। পেনশন ও বিমা ক্ষেত্রে ৪৯% বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া নিয়ে ক্যাবিনেট নোট তৈরি হয়েছে। কবে মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচিতে তা রাখা হবে, তা ঠিক করবে ক্যাবিনেট সচিবালয়। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার সবুজ সঙ্কেতের পর সংসদের বাদল অধিবেশনেই এই দু’টি বিল পেশ করা হবে।
প্রণববাবু গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার দেওয়ার পর অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিজের কাছেই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রণবের ইস্তফার পর দিনই তিনি অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বৈঠকে ডাকেন। তার পর তাঁর সচিবালয়ের তরফে বার্তা দেওয়া হয় যে, ভোডাফোনের উপর কর চাপানোর ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রক যে কড়া অবস্থান নিয়েছিল, তা লঘু করে সঙ্কটের এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শিল্প মহলের আস্থা অর্জন করতে চাইছেন। পাশাপাশি, কর ফাঁকি প্রতিরোধ নিয়মাবলি (জেনারেল অ্যান্টি ট্যাক্স অ্যাভয়ডেন্স রুল বা জিএএআর) নিয়ে লগ্নিকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে তা কাটাতে নিয়মাবলির খসড়া প্রকাশ করে শিল্পমহলের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে এটা যে শুধুই খসড়া এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই খসড়া এখনও খতিয়ে দেখেননি, তা স্পষ্ট করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট মহলের ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। অর্থাৎ শিল্পমহলের উদ্বেগকে যে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট।
কিন্তু এই দুই পদক্ষেপের জেরে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্তরে একটা ধারণা তৈরি হয় যে, আর্থিক নীতি নিয়ে প্রণববাবুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতের অমিল ছিল। এখন প্রণববাবুর অনুপস্থিতিতে তড়িঘড়ি পুরনো নীতি বদলাতে আসরে নেমে পড়েছেন মনমোহন। প্রণব-মনমোহন মতানৈক্যের কথা আগেই বলেছিলেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ। আজ আর এক বিজেপি নেতা মুরলী মনোহর জোশীও একই ইঙ্গিত করেছেন।
এই ধারণা জোরদার হলে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতি হবে আন্দাজ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র মনীশ তিওয়ারি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মধ্যে যে মতান্তরের কথা বলা হচ্ছে, তা একেবারেই মনগড়া।” তাঁর বক্তব্য, পরিবর্তিত আর্থিক বাতাবরণের কারণে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কংগ্রেসের এক নেতার মতে, মতান্তরের বার্তা গেলে এটাই মনে হবে যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহনের কোনও কর্তৃত্ব ছিল না। তিনি প্রণববাবুর কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ কর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি তো মন্ত্রিসভার বৈঠকেই অনুমোদিত হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টা কৌশিক বসুও আজ বলেছেন, “কোনও নীতি লঘু করা হয়নি। শিল্পমহলের কাছে প্রণববাবুর জমানাতেও যে সহযোগিতার বার্তা পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছিল, এখনও তাই হচ্ছে।”
সুপ্রিম কোর্টে মামলা হেরে যাওয়ার পরেও প্রণববাবু যে ভাবে ভারতে ব্যবসারত দুই সংস্থা ভোডাফোন ও হাচিনসনের মধ্যে বিদেশে হওয়া চুক্তির উপরে কর চাপিয়েছিলেন, তাতে আতঙ্ক ছড়ায় শিল্পমহলে। গত বাজেটে এই প্রস্তাব আনার পরেই তার বিরোধিতা করে বিজেপি বলে, পুরনো মামলায় এই ভাবে কর চাপানোর প্রয়োজন নেই। তার পর চাপের মুখে এই কর আদায় আগামী আর্থিক বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রক।
তবে সমস্যা হল, কর সংক্রান্ত বিষয়গুলি যে হেতু বাজেট প্রস্তাবের অঙ্গ ছিল, তাই রাতারাতি তা প্রত্যাহার করে নেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ বলেই ভোডাফোনকে নোটিস দেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছে।
আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত মনমোহনের পাশে থাকলেও দলের একটি অংশের মতে, যে ভাবে বিষয়টি নিয়ে হইচই হচ্ছে সেটা মোটেই কাম্য নয়। কারণ, রাজনৈতিক বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যদি সেই সব কর্মসূচি রূপায়ণ করতে না পারেন, তা হলে সরকারের মুখ পুড়বে। তা ছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার অনুকূল বাতাবরণ তৈরি করলেও বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত কতটা আসবে, তা নিয়ে সংশয় কম নেই। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “দেড় বছর বাদেই লোকসভা ভোট। ফলে আর্থিক সংস্কারের পথে দ্রুততার সঙ্গে এগোতে গিয়ে রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসের হাত পুড়তে পারে কিনা তাও বিবেচনা করতে হবে।” |
|
|
 |
|
|