জামিন পেয়ে গেলেন অভিযুক্ত বালিঘাটের অন্যতম মালিক শেখ মকবুল হোসেন। সেচ দফতরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছিল। শুক্রবার সিউড়ি আদালত ধৃতের জামিন মঞ্জুর করে। অভিযুক্ত অন্য মালিক শেখ কায়েম আলির খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
এ দিকে সেচ দফতরের মহম্মদবাজার এসডিও সুকান্ত দাসের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতেই বালিঘাট কর্তৃপক্ষ প্রায় শ’দুয়েক লোকজনকে দফতরে নিয়ে এসে হাঙ্গামা বাঁধানোর চেষ্টা করে। সুকান্তবাবু বলেন, “অফিসে কাজ করছিলাম। রাত ৯টা নাগাদ প্রচুর লোকজন অফিসে ঢুকে পড়ে। তারা ওই রাতেই নতুন করে তদন্ত করে রিপোর্ট থানায় জমা দেওয়ার চাপ দিতে থাকে। কার্যত তারা অভিযোগ তুলে নেওয়ার দাবি জানাতে থাকে।” পরে তারা ফিরে যায়।
প্রসঙ্গত, ময়ূরাক্ষী নদীর ওই বালিঘাটের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। সেচ দফতরের পক্ষে পুলিশের কাছে ওই বালিঘাটের বালিঘাটের দুই মালিকের বিরুদ্ধে সাঁইথিয়া থানায় অভিযোগও জানানো হয়েছিল। বহুদিন আগে অভিযোগ হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে। পরে জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনার হস্তক্ষেপে তৎপর হয় পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় এক মালিককে।
ওই বালিঘাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মহম্মদবাজার এলাকায় ময়ূরাক্ষী থেকে বালি তোলার অনুমতি থাকলেও তারা বেআইনি ভাবে সাঁইথিয়ার দেড়িয়াপুর পঞ্চায়েতের বৈদ্যপুর মৌজা থেকে বালি তুলছেন। বর্ষাকালে নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে নদীবাঁধের উপর ওই বালিঘাটের ভারী গাড়ি চলাচল করছে বলেও জানা গিয়েছে। ওই বালিঘাটের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, সেচ বা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমতি ছাড়াই সাঁইথিয়া-মহম্মদবাজার রাজ্য সড়কে দেড়িয়াপুরের সরবশিয়া মোড় থেকে নদীঘাট পর্যন্ত তিন ফসলি জমিতে মোরাম ফেলে রাস্তা বানিয়েছেন। অথচ ওই জমির শ্রেণিচরিত্র বদল করা হয়নি। সাঁইথিয়া ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেনেও নিয়েছে। বালিঘাটের মালিকপক্ষ অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জেলায় বালিঘাট নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেলার বিভিন্ন নদীর দুই পাড়কে ঘিরে ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর এক বালিঘাট গড়ে উঠেছে। জেলার এই সব বালিঘাটের একাংশের বিরুদ্ধে বারবার নানান বেনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বালিঘাটগুলি নিয়মের তোয়াক্কা না করে বালি তুলছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে বালিঘাট সংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরেরই এক শ্রেণির কর্মী। পুলিশও যে অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিষ্ক্রিয়ই থাকে তা সাম্প্রতিক বালিঘাট-কাণ্ডেই প্রমাণিত। অভিযোগকারীদের দাবি, প্রশাসন ও পুলিশের ‘উদাসীনতা’র জেরেই জেলা থেকে বালি-সহ একাধিক ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজ্য সরকার। |