এক সিপিএম কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম জটাই মেটে (৫০)। বাড়ি নানুরের থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকার কুড় গ্রামে। শুক্রবার সকালে গ্রামেরই এক ব্যক্তির খামারবাড়িতে খড়ের গাদায় জটাইবাবুকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গলায় কালসিটে দাগ রয়েছে। তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে ওই গ্রামে সিপিএম সদস্য জটাইবাবুর মামাশ্বশুর গোপাল মেটে নামে এক দলীয় কর্মী খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় ২৫ জন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তাঁরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। জটাই মেটে ছিলেন ওই খুনের ঘটনার অভিযোগকারী তথা প্রধান সাক্ষী। জটাইবাবুর স্ত্রী সোহাগীদেবীর দাবি, “দিন’তিনেক আগে কে বা কারা ফোনে আমার স্বামীকে ওই খুনের মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দেয়। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল তারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনি আর ঘরে ফেরেননি।” শুক্রবার সকালে তিনি খারাপ খবর পান। জেলা পুলিশ সুুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “জটাই মেটেকে কী উদ্দেশ্যে খুন করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে মৃতের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, অন্য একটি খুনের মামলায় অভিযোগকারী ছিলেন বলে তাঁকে খুন করা হয়েছে। আমরা সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখছি। প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নানুরের থুপসড়া পঞ্চায়েত এলাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা তথা এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ২০০৩ সালে তৃণমূল-বিজেপি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। উপপ্রধান-সহ দলের ১৩ জন সদস্য সিপিএমে যোগ দেওয়ায় পঞ্চায়েতের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয় তৃণমূলকে। একই ভাবে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেও তা ধরে রাখতে পারেনি সিপিএম। প্রধান-সহ সিপিএমের সাত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পঞ্চতায়েতের নিয়ন্ত্রণ হারাতে হয় সিপিএমকেও। এই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূলের ব্লক সাধারণ সম্পাদক মুন্সি নুরুল ইসলাম ওরফে সোনা চৌধুরী, সিপিএম কর্মী অভিরাম দাস-সহ বহু তৃণমূল ও সিপিএম কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। বহু বাড়ি পোড়ানো ও গোলাগুলি চলেছে। গোপাল মেটে সেই রাজনৈতিক রেষাষেরিরই ফল বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
রাজনৈতিক মহলের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পরে এলাকায় বহু বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তার পরেও হানাহানি বন্ধ হয়ননি। গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের হাত থেকে নানুর কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। তার পর থেকেই তুলনামূলক ভাবে এলাকায় খুন-সন্ত্রাস কিছুটা প্রশমিত হলেও এ দিনের খুনের পর ফের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমানের দাবি, “আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। জটাই মেটেকে ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। তার নিরাপত্তার খাতিরে আমরা ওই মামলা প্রত্যাহার করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে যে এই ঘটনা ঘটে যাবে ভাবতে পারিনি। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই আমাদের ওই কর্মীকে খুন করেছে।” অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষ বলেন, “আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। জটাই মেটে এমন কী গোপাল মেটের খুনের ঘটনায় আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়।” তাঁর দাবি, “সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ওই দু’টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।” পুলিশ জানায়, এ দিনের ঘটনায় কারও নামে অভিযোগ হয়নি। তদন্ত চলছে। |