জাতীয় স্তরের মূক ও বধির অ্যাথলিটকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার নাম করে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত অটোচালক রণজিৎ দাস গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। বুধবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ থানার বারুইবাড়ি এলাকায় গেলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বহু দিন ধরেই রণজিৎ মদ খেয়ে এলাকায় নানা আপত্তিকর কাজকর্ম করছিল। তা নিয়ে পঞ্চায়েত-পুলিশের কাছে জানিয়েও লাভ হয়নি। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ নইমুদ্দিন ও বিমল দাস বলেন, “রবিবার রাতে প্রবল বৃষ্টি চলছিল। সেই কারণে এলাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় বাসিন্দাদের চোখ এড়িয়ে রণজিৎ মূক ও বধির ওই তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। রণজিৎকে এর আগেও মাঝেমধ্যেই রাতের দিকে আমরা বাড়িতে মহিলা নিয়ে যেতে দেখেছি। প্রায় প্রতিদিনই মদ খেয়ে বাড়িতে ফিরে সে মায়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। এলাকার পরিবেশের কথা মাথায় রেখে আমরা বহুবার ওকে সতর্ক করেছিলাম। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও পুলিশকেও মৌখিকভাবে সবকিছু জানানো হয়েছিল। তখন ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না।” রণজিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবারের লোকজন কেউই বাড়িতে নেই। টিনের চাল দেওয়া এক চিলতে বেড়ার বাড়ি তালাবন্ধ। বাসিন্দারা জানান, রণজিতের বাবা অজিতবাবু কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। রণজিতের তিন দিদিরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মা কাপাসিদেবীকে নিয়ে রণজিৎ বাড়িতে থাকে। কিন্তু, লোকের বাড়িতে কাজ করার সুবাদে কাপাসি দেবী মাঝেমধ্যেই বাড়িতে থাকতে পারেন না। হেমতাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা কংগ্রেস নেত্রী শিবানী মজুমদার বলেন, “রণজিতের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের মুখে এর আগে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বাসিন্দাদের থানায় অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম। ওই যুবক তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির সদস্য হওয়ায় বাসিন্দারা পুলিশকে কিছু জানানোর সাহস পাননি। তবে তার বিরুদ্ধে সামবার দুপুরে ওই মূক ও বধির তরুণী থানায় ধর্ষণের অভিযোগ জানানোর পর আমি পুলিশকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি।” আইএনটিইউসির জেলা সভাপতি অরিন্দম সরকার শিবানী দেবীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ছেন। তিনি বলেন, “রণজিৎ কখনও কংগ্রেস আবার কখনও সিপিএম করত। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতেই কংগ্রেস মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।” হেমতাবাদ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি গোপাল মজুমদার জানান, রণজিতের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর অভিযোগ, সংগঠনের সদস্য ধর্ষণের ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ায় অরিন্দমবাবুরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অপূর্ব পাল বলেন, “রণজিৎ কোন দলের কর্মী তা খোঁজ না নিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি সে সিপিএম করত না।” পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ধৃতের কঠোর শাস্তির দাবিতে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফ। একই দাবিতে হেমতাবাদে ধিক্কার মিছিলও করে কংগ্রেস। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, ধৃতের বিরুদ্ধে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে! এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। পুলিশ আইন অনুয়ায়ী কাজ করছে। এ দিন মূক ও বধির ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।
জেল হাজত। প্রতিবেশীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সিঙিমারির প্রকাশ বর্মনকে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিল আদালত। বুধবার ওই ব্যক্তিকে তুফানগঞ্জ এসিজেএম আদালতের বিচারক অরুণ কুমার নন্দীর এজলাসে তোলা হয়। আগামী মাসের ১০ তারিখে অভিযুক্তকে ফের আদালতে তোলা হবে। পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্সিরহাট থানার সিঙিমারি এলাকার বাসিন্দা প্রকাশ বর্মন সোমবার রাতে প্রতিবেশী এক গৃহবধূর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। তাঁর মেয়েকেও অভিযুক্ত মারধর করে বলে মহিলা পুলিশে অভিযোগ জানান। ধর্ষণে অভিযুক্তের ভাই ভবদত্ত বর্মন এ দিন বলেন, “আমার দাদাকে কোনও ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। ও কোনও দলই করে না।” |