পাহাড়ে টানা বৃষ্টির জেরে কালজানি ও তোর্সার জল উপচে মঙ্গলবার দুপুরে তুফানগঞ্জের বালাভূত, ঝাউকুঠি, মধ্য বালাভূত এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে। রায়ডাকের জলে প্লাবিত হয়েছে শিকদারেরখাতা, ভুচুংমারি, নাককাটিগছ, অন্দরাণ ফুলবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার রাতে রায়ডাক নদীতে লাল সতর্কতা জারির পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে পড়ে। তুফানগঞ্জ পুরসভার ১, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক’শো পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েন। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাক চর, নিউ মদনমোহন পাড়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেখানকার প্রতিটি বাড়িতে ৪ ফুট জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। তড়িঘড়ি প্রশাসন ও পুরসভার কর্তারা নৌকা নামিয়ে জলবন্দি বাসিন্দাদের শহরের বিভিন্ন স্কুলে থাকার বন্দোবস্ত করেন। মঙ্গলবার সকালেও জল বাড়তে থাকায় ঘরে চৌকির ওপর চেয়ার টেবিল তুলে রাত কাটানো বাসিন্দারাও বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন। তুফানগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল বলেন, “ইতিমধ্যে শহরে ৮ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। প্রায় দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।” |
নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে বলরামপুর, দেওচড়াই, দ্বারিকামারি, রাজারকুঠি, চামটা, কামাতফুলবাড়ি, দ্বীপোরপাড়ের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা। তুফানগঞ্জ- ২ ব্লকের শালবাড়ি, বারকোদালি, রামপুর, জালধোয়া, ফলিমারি, মহিষকুচির বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর, আবাদি জমি, রাস্তাও জলে ডুবে রয়েছে। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিও তাপস সিংহরায় এদিন নাককাটিগছ এলাকার দুর্গতদের উদ্ধারের কাজের তদারকি করেন। বিডিও বলেন, “পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমরা সাধ্য মতো দুর্গতদের সাহায্যের চেষ্টা করছি।” তুফানগঞ্জের ইলাদেবী গার্লস হাইস্কুলের ত্রাণ শিবিরে বসে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অঞ্জলি বর্মন বলেন, “মঙ্গলবার রাতে ঘরে রায়ডাকের জল ঢুকতে শুরু করে। মুহুর্তের মধ্যে তা এক গলা হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই তড়িঘড়ি শিবিরে চলে আসি। বুধবার সকাল পর্য্যন্ত কোনও ত্রাণ পাইনি।’’ নাককাটিগছের রাধারানি দাসের অভিযোগ, “রাতভর চৌকির উপরে টেবিল বসিয়ে কাটিয়েছি। কেউ খোঁজ নেয়নি।” নাটাবাড়ির দ্বারিকামারির বাসিন্দা রমেশ রায় বলেন, “আমার ৩ বিঘা জমির পাট খেত জলের তলায় ডুবে রয়েছে। এলাকার অন্যদের ধান, সব্জি খেতেরও একই অবস্থা। পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ারে কালজানি, বাশরা, নোনাই, ঢোঢেয়া, ডিমা, পোরো নদীর জল ঢুকে পড়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আলিপুরদুয়ার শহরেও বৃষ্টির জল বের না হওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু এলাকা। বুধবার বাশরা নদীর জল বাড়ায় অস্থায়ী সেতু দিয়ে হ্যামিল্টনগঞ্জ থেকে হাসিমারা যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক অমলকান্তি রায় জানান, আলিপুরদুয়ার এক নম্বর ব্লকে বেশ কিছু যায়গায় জল ঢুকেছে ব্লক আধিকারিকরা ত্রাণের ব্যবস্থা করছেন। আলিপুরদুয়ার এক বিডিও প্রদীপ্ত ভগত জানান, এলাকায় ঘরবাড়ি ও শস্যের ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৬ কোটি টাকা। |