নারায়ণ দে • আলিপুরদুয়ার |
পাহাড় ও সমতলে টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে ফের জল বেড়েছে কোচবিহার ও ডুয়ার্সের নদীগুলিতে। দু’টি এলাকা মিলিয়ে জলবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। শুধু কোচবিহারের দু’টি মহকুমাতেই লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। অন্তত ৬০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। মঙ্গলবার বক্সিরহাটের গাবুয়ারডাঙায় সাবিত্রী দাস (৪২) নামে এক মহিলা বুড়া রায়ডাক নদীর তোড়ে ভেসে যান। বুধবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমায় লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে চার হাজার পরিবার ৪০টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের শুকনো খাবার, চাল সহ ত্রাণ দেওয়া হয়েছে।” তাঁর কথায়, “রায়ডাক ও কালজানি নদীর জল না কমলে উদ্বেগ কমবে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” |
রায়ডাকের জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। কালজানিতেও হলুদ সঙ্কেত জারি হয়েছে। মানসাই, গদাধর, সঙ্কোশ, ঘরঘরিয়া নদীর জল বেড়েছে। মেখলিগঞ্জে তিস্তা ও হাসিমারায় তোর্সায় হলুদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। জল ঢুকেছে তুফানগঞ্জ পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডেও। ওই পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকা চলছে। প্রায় ২ হাজার বিঘার শাক, সব্জি, পাট জলের তলায় চলে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে আর্জি জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। তিনি জানান, মূলত কালজানি ও নোনাই নদীতে ব্যাপক জলস্ফীতি হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের এক ও দুই ব্লকের পাটকাপাড়া, চালনির পাক, ধারায়েরহাট, চ্যাংপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বন্যা হওয়ায় বহু মানুষ গৃহহীন। দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “আমি বিধানসভায় ত্রাণমন্ত্রীর কাছে এই সব এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে আবেদন জানিয়েছি।”
মঙ্গলবার রাতে রায়ডাকের জলের তোড়ে ধলপলের ভুরকুশে একটি নির্মীয়মান সেতুর ৩০ মিটার এলাকা ভেসে গিয়েছে। বুধবার তুফানগঞ্জের নাককাটিগছে রায়ডাকে প্রায় ৪০ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। রায়ডাকের জল ঢুকেছে তুফানগঞ্জের ছাটরামপুর, বান্দেরকুঠি, নয়নেশ্বরী, নয়ারচর, চ্যাংমারি এলাকাতেও। তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের বিডিও তাপস সিংহরায় বলেন, “১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। সব মিলিয়ে শুধু এই ব্লকেই দুর্গতের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।”
কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক সুপর্ণ কুমার রায়চৌধুরী বলেন, “নতুন করে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উদ্ধারের কাজে নৌকা নেমেছে। অনেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।” কালজানি ও গদাধর নদীর জলে বুধবার বিকেলে প্লাবিত হয়ে পড়ে ভেলাপেটা, বসপাড়া, কুঠিবাড়ি, ধোপগুড়ি সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। |